২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে রাজপথে নামিয়ে আনলেন, এই মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী পতাকা হাতে নিয়ে এই ‘রক্ত পিপাসু’ শেখ হাসিনাকে পরাজিত করার জন্য তারেক রহমান যে পটভূমি তৈরি করেছেন এবং তরুণদের রাজপথে উদ্বুদ্ধ করেছেন, তা ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিতে নির্মিত স্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বরগুনা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদ্য গঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর তারেক রহমান জাতীয়তাবাদী পতাকা হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি শুধু দেশীয় রাজনীতি নয়, প্রবাসে থেকেও সংগঠনকে সুসংগঠিত করেছেন এবং তরুণ প্রজন্মকে গণতন্ত্রের সংগ্রামে সম্পৃক্ত করেছেন। তাঁর ভাষ্য, তরুণদের উজ্জীবিত করে রাজপথে নামানোর কৃতিত্ব স্বয়ং তারেক রহমানের। এই ইতিহাস কখনো ধূসর হবে না, বরং এটি চিরদিনের জন্য উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় তরুণদের সামনে নেতৃত্বের যে উদাহরণ রেখেছেন, তা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন প্রজন্মের জন্য স্বপ্নের মতো। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লা, সদস্য সচিব হুমায়ুন হোসেন শাহিন ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খানসহ নবগঠিত নেতৃবৃন্দের নাম উল্লেখ করেন। রিজভী বলেন, এই নেতারা আন্দোলন-সংগ্রামে অনড় থেকেছেন। পুলিশের নির্যাতন-নিপীড়নের মাঝেও הפעילות চালিয়ে গেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তাদের নেতৃত্বে বরগুনা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপি একটি আদর্শ সংগঠনে রূপান্তরিত হবে, যেখানে কোন চাঁদাবাজ, দখলদার বা সমাজবিরোধী স্থান পাবেন না। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে রিজভী বলেন, নতুন নেতৃত্ব জনগণের আস্থা অর্জন করবে এবং সেই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে মানুষ ধানের শীষে ভোট দেবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি গত ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করে আসছে, এই সংগ্রাম দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চালিয়ে যাচ্ছে। রিজভী অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী সরকার খালেদা জিয়াকে নির্যাতন ও কারা জীবন দিয়ে দমন করার চেষ্টা করলেও, তাঁর দৃঢ় মনোবল ও নেতৃত্বকে ঠেকানো যায়নি। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী শেখ হাসিনাকে একটি ভয়ানক ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন এবং অভিযোগ করেন, তিনি গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছেন এবং ভোটের অধিকার হরণ করেছেন। রিজভী আরও বলেন, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও নীলনকশা এখনো শেষ হয়নি; এ সবের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখে। তিনি প্রশ্ন করেন, যারা ২৮ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচার করেছে, তারা কীভাবে দুঃশাসন সক্ষম করে রেখেছে। বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিউইয়র্ক, লন্ডন, দুবো, কানাডা, অটোয়া এবং সিডনিতে তাদের সম্পদের বিপুল সমারাক্য গড়ে উঠেছে। খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অন্তত ৬০২টি সম্পদ বা প্লট পাওয়া গেছে, এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যও রয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যাপারে রিজভী বলেন, যদি ক্ষমতাসীনরা আরও দক্ষতা দেখাতে পারত, তাহলে নিউইয়র্কে ফ্যাসিবাদী দোসররা এমন দৃষ্টিতে সাহস করত না। তিনি দুর্নীতির মামলার অকার্যকারিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডিরেক্টরেট অফ ইনভেস্টিগেশনের (দুদক) কাছে ২৪ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা উত্তোলনের নির্দেশ থাকলেও তারা তা কার্যকর করতে পারে নি। আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে রিজভী বলেন, ওয়াসিম আকরাম, আবু সাঈদ ও মুগ্ধর জীবন ও রক্ত বৃথা যাবে না; তাঁদের আত্মত্যাগ দেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেবে।