সংগীতজীবনের ২৫ বছর পূর্ণ করেছেন তাহসান। এই বিশেষ উপলক্ষে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় সংগীত সফরের জন্য অবস্থান করছেন। তবে এই সফরকালে তার বড় একটি সিদ্ধান্ত জানান—তিনি তার মিউজিক ক্যারিয়ার শেষ করার কথা ভাবছেন। শান্তিপূর্ণ এই মিউজিক জীবনযাত্রার অবসান আসছে বলে মনে করছেন তিনি।
প্রথমে জানিয়ে দেন, এই সফর শেষ হলেও এটি তার চূড়ান্ত বিরতি নয়। তার কথায়, ‘এটি আমার শেষ কনসার্ট নয়, তবে শেষ ট্যুর। ধীরে ধীরে আমি হয়তো সংগীতের পথ থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’ এই ঘোষণা শুনে কনসার্টে উপস্থিত অনুরাগীরা হতভম্ব ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তাহসান তাদের শান্ত করে বলেন, ‘এটি স্বাভাবিক একটা বিষয়। আমার এই সিদ্ধান্তের কারণ হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাবে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘একসময় কি স্তেজে ঝাঁপানো যায় ডাড়ি মাথায়? মেয়ের বয়সও বড় হয়ে গেছে।’ এরপর তিনি গভীরভাবে বলেন, ‘অভিনয় থেকে আমি বেশ কয়েক বছর বিরতি নিয়েছি। এখন গান থেকেও ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছি। আজকের এই রাতটা বিশেষ হয়ে থাকবে, কারণ হয়তো আর কখনো এই মেলবোর্নে ফিরবেন না। তবে, আমি আপনাদের মনে কিঞ্চিৎ থাকব। আমি আপনাদের খুব মিস করব।’
তাহসান ১৯৯৮ সালে বন্ধুদের সঙ্গে অলটারনেটিভ রক ব্যান্ড গড়েন। তবে তার পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয় ২০০০ সালে ব্ল্যাক ব্যান্ডের মাধ্যমে। তখন থেকেই তিনি সংগীতজীবনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। দ্রুত সময়ে তিনি নিজের একক ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন, যেখানে তার রয়েছে অগণিত হিট গান ও সফল অ্যালবাম। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘আমার পৃথিবী’, ‘এখনো’, ‘ঈর্ষা’, ‘আলো’, ‘প্রেম তুমি’, ‘প্রেমাতাল’, ‘হঠাৎ এসেছিলে’, ‘কে তুমি’ ইত্যাদি। মোট ৭টি একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামেও অংশগ্রহণ করেছেন।
সঙ্গে তিনি ‘তাহসান অ্যান্ড দ্য সুফিজ’ ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে ‘তাহসান অ্যান্ড দ্য ব্যান্ড’ এর পারফর্ম করছেন। সংগীতের পাশাপাশি তিনি দারুণ একজন অভিনেতা হিসেবেও পরিচিত। নাটক, ওয়েব কনটেন্ট ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তবে কিছুকাল ধরে অভিনয় থেকে দূরে থাকছেন। তার সর্বশেষ দেখা গেছে গত বছর ‘বাজি’ ওয়েব সিরিজে। এই সিরিজের মধ্য দিয়ে প্রায় দুই বছর পর তাকে আবার অভিনয়ে দেখা যায়। পাশাপাশি তিনি ‘ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানের প্রথম সিজনে উপস্থাপনাও করেছেন।
গত বছরে কণ্ঠনালির সমস্যার কথা জানান তাহসান। বলছিলেন, ছয় বছর ধরে তিনি ভুগছেন এই সমস্যা নিয়ে। ভোকাল কর্ডে এক রোগ ধরা পড়ে, যা মূলত ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়। এর ফলে তিনি এখন আর আগের মতো সহজে গান গাইতে পারেন না। এমনকি তিনি নিজেও ভাবতে শুরু করেন, তিনি কি আবার গাইতে পারবেন কিনা। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে কণ্ঠনালিতে সমস্যা ধরা পড়ে, এরপর থেকে অনেক ধরনের অসুবিধায় পড়তে হলো। ভয়ও পেয়েছি যে, হয়তো আর গান গাইতে পারব না। এখন আমি বুঝতে পারছি আমার গলার অবস্থা কখন ভালো, কখন খারাপ। এই অবস্থার কারণে আমার গাওয়া কমে গেছে।’ বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই পরিস্থিতির কারণে তার জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এনেছেন। তিনি বলছেন, ‘এখন যদি আমি ধারাবাহিকভাবে কম গাই তাহলে বুঝবেন ব্যাপারটা কঠিন হয়ে গেছে। আমি আপনাদের দোয়া চাই যাতে এই সমস্যা আরো বেশি না বাড়ে।’