বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একেভাবে স্পষ্ট করেন যে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান এমনই যে, যদি কোনো রাজনৈতিক দল গণহত্যা বা দেশের সংবিধানের ভিত্তিকে নষ্ট করার মতো জঘন্য কাজে জড়িত থাকে, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দণ্ডও প্রয়োগ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ম্যাগাজিনে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে নিজেরাই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং একটি ফ্যাসিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা এখন অনেকটাই কমে গেছে। তবে, আওয়ামী লীগের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত যারা ইনস্টিটিউশন ধ্বংসে সহায়তা করেছে, তাদের সব বিচার হওয়া উচিত এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি পাওয়াও জরুরি।
ফখরুল আরও বলেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলকে ‘ব্যান’ বা নিষিদ্ধ করতে চায় না। তবে, যদি সেই দল গণহত্যার মতো অমানবিক কাজে জড়িত হয়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দেয় বা দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার করা হবে। তিনি স্পষ্ট করেন, রাজনৈতিক পার্টি হিসেবে অন্য রাজনীতির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, কিন্তু যদি কোনও দল দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, প্রতারণা করে বা গণহত্যায় জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের শাস্তি নিশ্চিতভাবেই পেতে হবে।
নির্বাচন সম্পর্কেও ফখরুল জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে এখন অকার্যকর আস্থা তৈরি হয়েছে, যা দূর করে নতুন বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। সবাইকে সচেষ্ট হওয়া দরকার যেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের বৈঠকগুলো ও তার নির্বাচনী সহযোগিতা সম্পর্কেও তিনি জানান, এগুলো দৃষ্টিভঙ্গিরা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সরকার ও সেনাবাহিনী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি সব সময়ই জটিলতায় ভরা, আর শত্রুরা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বিভাজনের রাজনীতি করে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে, যা সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ায় আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। তার মতে, এই অবিশ্বাস দূর করতে হবে এবং দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও নেতাদের মধ্যে আস্থা পুনঃস্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সেরাটা অর্জনের জন্য বার্গেনিং করে থাকে, যা স্বাভাবিক। দলগুলো আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে নিজেদের দাবিপূরণ করে, এটি অপরাধ নয়। অনেকটা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধান সম্ভব, এবং বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
সম্প্রতি ড. ইউনূসের সফর ও বক্তব্যে দেখা যায়, তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে, বিএনপি মহাসচিব জানিয়ে দেন, ব্যক্তিগতভাবে কোনও প্রেম বা আলোচনায় তিনি ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক বর্তমানে খারাপ হওয়ার কোনও বিষয় নেই। দলগুলো একসঙ্গে থাকতে পারে, তবে সম্পর্কের ধরণ সময়ের সঙ্গে বদলাতে পারে।
প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সাক্ষাৎকারে অনেকের মনোভাব ও অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে বলে জানান, বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, দল আরেকটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কোনও অপ্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞা বা ব্যান্ডিং চায় না। তার মতে, রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সব দলই নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করে। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে; সমস্ত আইনী ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে তিনি ফিরে আসবেন। এখন পর্যন্ত, তিনি দেশের আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।