চীনা সীমান্তের কাছাকাছি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য গত নয় সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় অনশন। তাদের মধ্যে ছিল লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা এবং চাকরিতে সংরক্ষণ চালু করার দাবী, পাশাপাশি লেহ ও কার্গিলের জন্য একটি লোকসভা আসনেরও প্রয়োজনীয়তা। এই দাবিগুলোর সত্যতা নিয়ে বেশ কয়েকটি দল এবং অধিকারকর্মী আন্দোলন চালাচ্ছেন।
তবে, গত মঙ্গলবার রাতে পরিস্থিতি তখনই দ্রুত বিপরীত মোরঠে যায় গুরুতর আহত হন অনশনকারী দুই ব্যক্তি, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর শুক্রবার লেহ শহর তীব্র আন্দোলনের এক ঢেউয়ে পরিণত হয়। বিশাল সংখ্যক জনতা পথ চলা শুরু করে, নানা স্লোগান দিয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে মিছিল করে। ডিজে-সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা, পুলিশের অফিস ও গাড়িতে পাথর ছোড়া ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে বাধ্য হয় এবং জনতার মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অনশনরত আন্দোলনকারীদের একজন ওয়াচুংক উসকানিমূলক বক্তৃতা দেয়ার পর জনতা উত্তেজিত হয় এবং সরকারি অফিসে হামলা চালায়। এছাড়াও, পুলিশের গাড়ি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এতে ৩০ জনের বেশি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থলে গুলি চালাতে বাধ্য হন পুলিশ, যার ফলে কিছুজনের মৃত্যু ঘটে।
অভ্যুত্থানের নেত্রী সোনম ওয়াংচুক সবশেষে বলেন, আমি চাই সব যুবক যেন এই সহিংসতা দ্রুত বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ পথে ফিরে আসে। তিনি আরও বলেন, এই দিনটি লাদাখের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক কারণ গত পাঁচ বছর ধরে এখানকার মানুষ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন, বহু বার অনশন ও হাঁটূ মৃত্যুর মতো পথ অবলম্বন করেছেন।
সোনম আরও বলেন, “আজ শান্তির সারিবদ্ধতা কোথাও থাকছে না, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা রাতারাতি বেড়ে গেছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, সহিংসতা বন্ধ করে অবিলম্বে আলোচনা পথে ফিরে আসতে। আমরা অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাব। যখন শান্তি উপেক্ষিত হয়, তখনই এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।”
ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, লেহ ও কার্গিলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি বৈঠক আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও, গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এই আলোচনায় সংরক্ষণ ও অন্যান্য দাবি দাওয়া সমাধানের জন্য বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে, যেমন মেয়েদের জন্য এক তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ, সরকারি ভাষার স্বীকৃতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া। তবে, কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রবৃত্তি ও গোষ্ঠী এই আলোচনাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে ধারণা।
এখন প্রশ্ন উঠছে, লাদাখের এই আন্দোলন কি ‘জেন জি’ বা প্রজন্মের চলমান ক্ষোভের অংশ? শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপালসহ অন্য দেশেও কি ‘জেন জি’র এই তরুণ প্রজন্ম তাদের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ করছে?
ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার সময় সাংবাদিক স্যমন্তক ঘোষ বলেন, “অভিযানের মধ্যে দিয়ে এটাকে মূলত জেন জি আন্দোলন বলাই যায়। অনশনরত দুই তরুণের শরীর খারাপ হওয়ার পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এর ফলে বেশ কিছু তরুণ রাস্তায় নামেন। বিকেল চারটার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়, যদিও কারফিউ বহাল রয়েছে। এরপরই সিআরপিএফের গুলিচালনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। তবে, মোটামুটি স্পষ্ট যে, পুরো বিষয়টি জেন জি আন্দোলনের অংশ।”
ভারতের জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, এই আন্দোলন মূলত যুবকদেরণ। তবে বিজেপির কিছু নেতা দাবি করছেন, এই সহিংসতার পেছনে আছে কংগ্রেসের মদত, যারা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্ঠা করছে।
অন্যদিকে, বড় শহর ও লাদাখে সংঘটিত এই সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছে। ভারতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর জানিয়েছেন, এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। রাতের মধ্যে ৫০জনের বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেরও কংগ্রেসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে, এনডিটিভি।