ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, ব্যালট পেপার ছাপানোর স্থান বা পরিমাণ কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে না। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ব্যালট পেপার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলি সম্পন্ন করা হয়, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
উপাচার্য জানান, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন পর্যায়ে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার প্রতিটির জন্য তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। মোট ৪৮টি সাধারণ অভিযোগের উত্তর প্রদান করা হয়েছে এবং ১৬টি অভিযোগের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে সরকারি সংস্থা ও অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে। তারপরও নির্বাচনের কর্মপদ্ধতিকে কেন্দ্র করে কিছু অস্পষ্ট প্রশ্ন ও সন্দেহ সৃষ্টি করতে চায় আসরগুলো, যা তিনি বন্ধ করতে চান। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নির্বাচনের পদ্ধতিগত দিক নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে, যা সম্ভবত বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হচ্ছে।
আজ রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
বক্তব্যে তিনি জানান, নির্বাচনের জন্য ব্যালট পেপার তৈরির জন্য একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। একটি নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা নিয়ম অনুযায়ী করা। ভোটার ও প্রার্থীর সংখ্যা বেশি বিবেচনায় রেখে একই টেন্ডারের অধীনে অতিরিক্ত একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান যোগ করা হয়, যদিও এই বিষয় সম্পর্কে মূল ভেন্ডর কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করেনি।
উপাচার্য জানিয়েছেন, সহকারী ভেন্ডরের ব্যাখ্য অনুযায়ী, নীলক্ষেতের কারখানায় ২২ রিম কাগজ ব্যবহার করে মোট ৮৮,০০০ ব্যালট ছাপানো হয়। পরে প্রিন্টিং, কাটা ও প্রি-স্ক্যানের মাধ্যমে ৮৬,০০০-এর কিছু বেশি ব্যালট প্যাকেটে ভরে সিলগালা করে সরবরাহ করা হয়। অবশিষ্ট ব্যালট কাগজ ধ্বংস করা হয়। জানানো হয়, কাটিং শেষে ব্যালটগুলো তাদের অফিসে নিয়ে গিয়ে প্রি-স্ক্যান করে প্রয়োজনীয় সমাপ্তি কার্যক্রম শেষ করে, এরপর সেগুলো সিলগালা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। তবে কাজের ব্যস্ততার কারণে, নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর বিষয়টি প্রক্রিয়া চালাকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়নি বলে স্বীকার করেছেন ভেন্ডর।
উপাচার্য আরও বলেন, শুধু ব্যালট ছাপানো যথেষ্ট নয়; তা ভোটের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য যথাযথ মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে যথাযথ কাটিং, নিরাপত্তা কোডের ব্যবহার, ওএমআর স্ক্যান, চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও সিল, এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর। এসব ধাপ সম্পন্ন করেই ভোট গ্রহণের জন্য ব্যালট প্রস্তুত হয় এবং সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি জানান, মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৪টি ব্যালট ভোটের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মোট ভোটার ছিলেন ৩৯,৮৭৪ জন, প্রত্যেকে ৬টি করে ব্যালট পান। ভোট দিয়েছেন ২৯,৮২১ জন, যার ফলশ্রুতিতে ব্যবহার করা হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৬ ব্যালট। অবশিষ্ট থাকে ৬০ হাজার ৩১৮ ব্যালট।
অভিযোগের প্রসঙ্গে ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ফুটেজ সংক্রান্ত বিষয়ে যদি কোনো প্রার্থী সুনির্দিষ্ট সময় বা ঘটনা অনুসারে ফুটেজ দেখার আবেদন করেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেটি দেখানোর ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি, ভোটারদের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা বা অন্য কোনো তথ্য দেখার জন্য প্রয়োজন হলে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন দিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করবে।