বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম দ্রুত বাড়ছে, যা দেশের বাজারিকেও নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশের বাজারে ভরতিপ্রতি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫৭৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই নতুন দাম অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি (প্রায় ১১.৬৬৪ গ্রাম) নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৯৬ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। মঙ্গলবার থেকে এই দাম কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছে বাজুস।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি বা পিওর গোল্ডের মূল্য বেড়ে গেলেও, এই পরিস্থিতিতে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন দেশীয় বাজারে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের মূল্য ভরিতে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৯৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১৮২ হাজার ৪৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১৫৬ হাজার ৪২৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৭ টাকায়।
বাজুস আরও জানিয়েছে, স্বর্ণ বিক্রির জন্য সরকারের ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ৬ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি যুক্ত করতে হবে, তবে গহনার ডিজাইন এবং মান অনুযায়ী মজুরির ভিন্নতা হতে পারে।
বিশ্ববাজারে এর আগে কখনো এক আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়নি। সম্প্রতি এক দিনে ৩৪ ডলার মূল্যবৃদ্ধির ফলে এক মাসে মোট দাম বেড়েছে প্রায় ১০.৩৫ ডলার। এক মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ৪০০ ডলার বেড়েছে। এর আগে, ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের স্বর্ণের দাম নতুন করে নির্ধারণের সময়, বিশ্ববাজারে এক আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ৩ হাজার ৬৯০ ডলার। এরপর দাম কিছুটা কমে গেলে ১৮ সেপ্টেম্বর কিছুটা দাম সমন্বয় করা হয়, পরে ফের বিশ্ববাজারের দর বেড়ে ২০ সেপ্টেম্বর আবারও দাম বাড়ানো হয়। ঐ দিনে, ২২ ক্যারেট মানের ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৫৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৮৯ হাজার ৬২২ টাকা হয়। একই ভাবে ২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দর ১ হাজার ৯৭ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ হাজার ৬৯৯ টাকায় দাঁড়ায়।
সোনার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনের কারণ হিসেবে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মার্কিন শুল্ক ও ট্যারিফ নিয়ে জটিলতার কারণে পরিস্থিতি বেড়েছে। তারা চীন, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে বৈঠক করছে। এর প্রভাব ডলারে পড়ছে। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের গোলযোগের কারণে মধ্যপ্রাচ্যবাসীর ডলারের প্রতি আস্থা কমে গেছে, ফলে তারা নিরাপদ হিসেবে রিজার্ভ হিসেবে স্বর্ণ কিনছে। পাশাপাশি, খনিতে স্বর্ণ উত্তোলন কম থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। এসব কারণের ফলস্বরে স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। এই দাম বাড়ার কারণে দেশে জুয়েলারি ব্যবসা কিছুটা মন্দার প্রবণ হয়েছে এবং দেশের স্বর্ণের বাজারের আকারও ক্ষুদ্র হয়ে যাচ্ছে।