অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন যে পুঁজিবাজার থেকে প্রতিনিয়ত মুনাফা আসবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তিনি সতর্ক করে বলছেন, কেউ যদি এই বিশ্বাসে বিনিয়োগ করে থাকেন, তবে এটি তার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। বাজারে মূলধনের দিক থেকে লাভের পাশাপাশি ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত সচেতন থাকা এবং বুঝতে হবে যে শেয়ার বা বন্ড কেনা মানে কখনো কখনো ক্ষতিও হতে পারে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব ক্ষেত্র, অবকাঠামো সরবরাহ এবং ইসলামী মানি মার্কেট উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা আরো জানান, বাংলাদেশে মূলধনের বাজার এখনো সম্পূর্ণভাবে বিকশিত নয়। সরকারি বন্ডের সেক্টর থাকলেও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ খুবই কম, আর শেয়ারবাজারের অবস্থা তো আরও নগণ্য। ফলে বড় বড় প্রকল্পের অর্থায়নে তথাকথিত ঝুঁকি ভাগাভাগি না করে একমাত্র ব্যাংকের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এর ফলে ঋণখেলাপি ও তহবিলের অপব্যবহারের ঘটনা বাড়ছে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। আসলে ঝুঁকি কমানোর জন্য মানুষকে বন্ড, ডিবেঞ্চার ও শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংক থেকে শুধুমাত্র ঋণ নেওয়া ও ভুয়া খাতে ব্যয় করা সমাধান নয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে সুকুক বাজারে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বন্ড রয়েছে, তবে এগুলোর প্রায়ই শিক্ষা ও স্যানিটেশন খাতে ব্যবহৃত হওয়ায় আয়ের হার কম। যদি এই বন্ডগুলো উৎপাদনমুখী প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়, তবে লাভজনক হওয়া সম্ভব এবং ব্যাংকের ওপর চাপও কমবে। সুতরাং, সুকুক অবশ্যই প্রকৃত সম্পদভিত্তিক হতে হবে যেন বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পায়।
অর্থ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে এখনও সিকিউরাইজেশন কার্যক্রম পুরোপুরি কার্যকরী হয়নি। কিন্তু মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্পের জন্য এ পদ্ধতি প্রয়োগ করলে বিশ্বব্যাংকের ঋণে নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসত। এছাড়া, পেনশন ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এগুলো সরকারের দায়বদ্ধতা।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, শুধু মূলধন ও সুকুকের বাজারই নয়, বীমা বাজারের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে কর কাঠামো ও প্রণোদনা সংস্কার করতে হবে যাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পান।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ প্রমুখ।