গাজায় অবিরাম চলছে কথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ বলে প্রচারিত এলাকা থেকেও ইসরায়েলি বর্বর হামলা। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আরও কমপক্ষে ৯১ জনের মৃত্যু হয় এই হামলায়। আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে উপেক্ষা করে অবরুদ্ধ এ অঞ্চলটি আরও জোরদার করেছে দখলদার বাহিনী তাদের স্থল অভিযান।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বকভাবে দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার নামে ‘মানবিক নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি করার দাবি করলেও আসলে সেসব এলাকাতেও বারবার হামলা চালানো হচ্ছে। ১১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় ১৩৩টি হামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৯০৩ জন নিহত হয়েছেন, যা এই অঞ্চলের মোট প্রাণহানি প্রায় ৪৬ শতাংশ।
সংস্থাটির মতে, এই হামলাগুলো স্পষ্ট করে যে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে টার্গেট করা হচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক সমাজের হস্তক্ষেপের জন্য দাবি জানিয়ে বলেছে, যদি বিশ্ব কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই হামলা আরও ভয়ঙ্কর এই হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন হয়ে থাকবে।
হামলার কারণে গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাপক সংকটে পড়েছে। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে, তীব্র গোলাবর্ষণের ফলে জর্ডান ফিল্ড হাসপাতাল থেকে ১০৭ রোগী ও চিকিৎসক-সহ অন্যান্য কর্মীর প্রয়োজনীয় সরিয়ে নেওয়া হয়।
গাজার অধিকাংশ হাসপাতালই আগেই সংকটের মধ্যে পড়েছিল, এখন অ্যানাস্থেসিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো মৌলিক উপকরণ বর্তমানে মজুত নেই। খাদ্য ও ওষুধের জন্যে হাহাকার চলছে, চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। দক্ষিণের হাসপাতালে কিছু পরিমাণ চিকিৎসা চললেও, আহতর সংখ্যায় ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় চাপ আরও বেড়েছে।
আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসক খলিল দিগরান অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজার শিশুদের জন্য একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রান্তিসি হাসপাতালকেও ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করে আগ্রাসন চালাচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, চলমান হামলা অব্যাহত থাকলে দক্ষিণের হাসপাতালগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বিশ্বজুড়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। জার্মানির বার্লিন ও যুক্তরাজ্যের লিভারপুলসহ বিভিন্ন শহর থেকে এই হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলন চলেছে।
আন্তর্জাতিক মহলও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছিলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য কিছুটা অগ্রগতি হতে যাচ্ছে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে এই ব্যাপারে কোনও নতুন পরিকল্পনা বা প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। হামাসের একজন কর্মকর্তা আল-জাজিরাকে জানান, তাদের কাছে কোন প্রস্তাব আসেনি।
অন্যদিকে, আগামী সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হবে।