ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ সম্প্রতি কর্মস্থলের নীতিমালা লঙ্ঘন এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। একই সঙ্গে, ৪,৯৭১ জন কর্মীকে ওএসডি (অন সার্ভিস ডিউটি) ঘোষণা করা হয়। ওএসডি হওয়া কর্মীরা এখন বেতন-ভাতা পেয়েছেন, তবে তারা আপাতত কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এর ফলে ব্যাংকের অভ্যন্তরে কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের দ্বারা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বহু কর্মী সরাসরি সোয়াইভি দিয়ে নিয়োগ লাভ করেন, যেখানে কোনও লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই ছিল পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা, যার ফলে বর্তমানে ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অঞ্চল থেকে আসা।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, “এস আলম গ্রুপের সময় অযোগ্য লোকজনের নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংককে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সবাইকে যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক ও হাইকোর্টের নির্দেশে ২৬ সেপ্টেম্বর এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৫,৩৮৫ জন কর্মকর্তা ডাক পাওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৪১৪ জন অংশ নেন। যারা উপস্থিত হতে পারেননি, তাদের সবাইকেই পরের দিন থেকেই ওএসডি করে দেওয়া হয়। এছাড়াও, পরীক্ষার প্রক্রিয়া কেন্দ্রীক বিভ্রান্তি ও প্রকাশ্যে বিরোধিতা চালানোর কারণে ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
ওএসডি হওয়া কর্মীদের অভিযোগ, তারা হাইকোর্টে রিট করলে আদালত নিয়মিত প্রমোশনাল পরীক্ষা চালানোর আদেশ দেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই আদেশ অমান্য করে আলাদা যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার আয়োজন করে, যা বেআইনি বলে তারা মনে করছেন। তারা আবারও আদালতের শরণাপন্ন হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “অনুসন্ধানী ছাঁটাইয়ের জন্য এ ধরনের পরীক্ষা দেশে এই প্রথম। সাধারণত পদোন্নতির জন্য ভাইভা নেওয়া হয়, তবে এই ধরনের যোগ্যতা যাচাই প্রথমবারের মতো।” তিনি আরও বলেন, “ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই নিয়োগ বা কর্মী যাচাইয়ের এখতিয়ার তাদের হলেও, অবশ্যই দেশের আইন ও নীতিমালা মেনে সেটি করতে হবে।”
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়, যার ফলে ব্যাংকটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। ২০২৪ সালে পরিবর্তিত সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রদবদল এনে এস আলমের প্রভাব কমানোর পাশাপাশি ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।