পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকা কাশ্মিরে চলমান চার দিনের ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভে অন্তত আটজন নিহত হন। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন, যাতে বিভিন্ন দিক থেকে পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান উত্থাপন করা যায়।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত চার দিনে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, যারা আশপাশের শহর থেকে এসে কাশ্মিরের অন্যতম শহর মুজাফফরাবাদে জড়ো হন। তবে এই বিক্ষোভের পুরো চিত্র বাইরের বিশ্বের কাছে এখনো খুবই সীমিত। ফলে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট বোঝা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, কর্তৃপক্ষ টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। উল্লেখ্য, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিরোধের ঐতিহ্য ১৯৪৭ সাল থেকেই চলে আসছে, যখন এই অঞ্চল দু’দেশের মধ্যে বিভক্ত হয়।
বিক্ষোভের অংশবিশেষের ছবি থেকে দেখা যায়, বুধবার কাশ্মিরের একটি সেতুর ওপর বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে দিচ্ছে পুলিশ। রয়টার্সের সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বক্তব্যে, এই সহিংসতায় অন্ততঃ তিন পুলিশ সদস্য ও পাঁচ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। শুরুর দিন থেকেই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
বিক্ষোভের কারণে হাসাপাতাল, স্কুল এবং পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, কাশ্মিরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বিক্ষোভকারীদের আলোচনার জন্য আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তান সবসময়ই কাশ্মিরি ভাইদের সমাধানের জন্য প্রস্তুত।” একই সঙ্গে, পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, “আমরা আশা করি, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারব।”
কাশ্মিরের সুশীল সমাজের নেতারা বলছেন, এই বিক্ষোভ মূলত রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তাদের সুবিধা-অধিকার এবং প্রভাবের বিরোধিতার জন্য। একজন স্থানীয় যুব নেতা শওকত নবাজ মীর বলেন, “আমরা যখন হাসপাতালে ওষুধের জন্য বলি, তখন তারা বলে, তহবিল নেই, কিন্তু তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য অর্থ আছে।”
স্থানীয় সংসদে পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসন বরাদ্দের বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাশ্মিরের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, এই প্রতিনিধিদের ব্যবহার করে আঞ্চলিক সরকারকে ক্ষমতায় বসানো বা সরানোর চেষ্টা করা হয়।
গত বছরও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মিরে এই ধরনের সহিংস আন্দোলন দেখা গিয়েছিল, যেখানে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে সরকার কাশ্মিরিদের বেশিরভাগ দাবি মানেন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি রুপি (প্রায় ৮.৬ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ করেন, যার মধ্যে বিদ্যুৎ ও জিনিসের দাম ভর্তুকির বিষয়টি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সুত্র: রয়টার্স