গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরাইলের নেওয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন দেশ তাদের গভীর উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, তুরস্ক, ব্রাজিল, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ অনেক রাষ্ট্রই এ বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন। কেউ সরাসরি ইসরাইলের এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন, আবার কেউ বন্দি নাগরিকদের জন্য কনস্যুলার পরিষেবা দ্রুত নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে। আল-জাজিরা নোঙর করা এই গ্লোবাল ফ্লোটিলার বাধা ও ইসরাইলের আটক অভিযানের বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে। বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইসরাইলে এই অবরুদ্ধ ফ্লোটিলাকে আটকালো নিয়ে ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’। তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পরিস্থিতির নিরাপদ সমাধান জরুরি। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘আমরা বহু বৃটিশ নাগরিকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ত্রাণ যেন মানবিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিরাপদে গাজায় পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। গাজায় মানবিক সঙ্কটের সমাধান দায়িত্বে রয়েছে ইসরাইলি সরকার। অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করে খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য দ্রুত পৌঁছানোর আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাজ্য।’ অস্ট্রেলিয়াও জানিয়েছে, গাজা উপকূলে ফ্লোটিলায় ইসরাইলি সেনাদের হাতে কর্মীদের আটক হওয়ার খবর তারা জেনে গেছে এবং প্রয়োজনে তাদের নাগরিকদের জন্য কনস্যুলার সহায়তা দিতে প্রস্তুত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সব পক্ষই আন্তর্জাতিক আইন মানার আহ্বান জানাচ্ছে। স্পেনে, গাজা যায় এমন ফ্লোটিলার ঘটনা নিয়ে মাদ্রিদে ইসরাইলে থাকা উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকদের তলব করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস বলেছেন, স্পেনে ৬৫ জন স্পেনীয় নাগরিক রয়েছেন। গত বছর ইসরাইল ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেওয়ার পর, তারা মাদ্রিদ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হস্তক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাাণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, এই কর্মকাণ্ড সত্যিই গণহত্যা চালানোর নীতিরই অংশ, যা গাজাকে বিপর্যস্থ করে দিয়েছে। ব্রাজিলের পক্ষ থেকে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে থাকা কয়েকজন ব্রাজিলিয় নাগরিকের মধ্যে সংসদ সদস্য লুইজিয়ানে লিন্সও রয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলের সামরিক অভিযান মানবাধিকার লঙ্ঘন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের জন্য গুরুতর হুমকি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই অভিযানকে ‘নৃশংস আক্রমণ’ আখ্যা দিয়ে বলছেন, তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দ্রুত সবাইকে মুক্তি দেয়া হবে। কারণ তারা মূলত বাধ্যতামূলকভাবে ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ বহন করছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডালা ম্যান্ডেলা এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, বিশ্বজুড়ে জনগণের জন্য তারা সরকারের উপর চাপ চাপানোর আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে গাজায় নিরাপদে ত্রাণ পৌঁছাতে পারে। তিনি আরও বলেন, ইসরাইলিরা যদি তাদের অপহরণ করে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে এই ফ্লোটিলার মুক্তির জন্য চাপ বাড়ানো। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক স্ট্যাটাসে বলেছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলের অধিকার রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ইসরাইলের হস্তক্ষেপ অবৈধ। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তাদের নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা আরও বলছেন, ইসরাইল শুধু ফিলিস্তিনিদের অধিকারই অমান্য করেনি, বরং বৈশ্বিক মানবসমাজের বিবেককেও পদদলিত করছে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো জানিয়েছেন, ইসরাইলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার ও মুক্তি চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলছেন, নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য দেশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত দাবি জানানো হবে। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন, ইসরাইল নিশ্চিত করেছে যে, নৌবহরের বিরুদ্ধে কোনও সহিংস কর্মকাণ্ড হবে না। ইতালীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশ সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, যা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতি তাদের সমর্থন জানায়। গ্রিসের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ইসরাইলের অধিকারীকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান করেন। আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস সতর্ক করেছেন, গাজায় মানবিক ত্রাণ আগস্ট বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা কোনওভাবেই মানা উচিত নয়। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাকসিম প্রেভো বলেছেন, তাঁদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া। ফ্রান্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সকল অংশগ্রহণকারীর কনস্যুলার পরিষেবা এবং নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। মার্কিন ডেমোক্র্যাট সদস্যরা হোয়াইট হাউসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। জাতিসংঘ এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেছেন, পশ্চিমা দেশের নীরবতা লজ্জাজনক। বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনপন্থীরা ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছেন। ইসরায়েল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে আটকানোর ফলে অন্তত ৪০টির বেশি নৌকা এবং একশো’র বেশি অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনার পর গোটা বিশ্ব থেকে নেতারা দ্রুত নিন্দা জানিয়েছেন, গাজায় প্রবেশের এবং মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমের পথে বাধা দেওয়া অবৈধ। ফিলিস্তিন, তুরস্ক, ব্রাজিল, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউরোপের দেশগুলোসহ বহু দেশে প্রতিবাদ ও অনুশীলন চলেছে। এই ৫০০ সদস্যের নৌবহরে অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন, যারা আন্তর্জাতিক সমর্থন ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।