আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী বেআইনিভাবে অন্তত ৪৪৩ জন স্বেচ্ছাসেবীকে অপহরণ করেছে বলে খবর দিয়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। এই ঘটনায় জাহাজে থাকা কর্মীদের উপর জলকামান চালানো হয়েছে এবং নোংরা পানি ছিটানো হয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি। অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের যোগাযোগের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংগঠনের বিবৃতিতে জানানো হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানবিক সহায়তা বহনকারী জাহাজগুলো, বিশেষ করে গাজা যাওয়ার পথে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবককে অপহরণ করেছে। এই জাহাজগুলোতে ছিল খাবার, শিশুদের দুধ, ওষুধের মতো জরুরি সামগ্রী এবং স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ছিল ৪৭ দেশের।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলি নৌবাহিনী জলকামান নিক্ষেপ করে, দুর্গন্ধযুক্ত পানি ছিটিয়ে, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়, ফলে স্বেচ্ছাসেবকরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। পরে তাঁদের জোরপূর্বক ইসরায়েলি সামরিক জাহাজ MSC Johannesberg-এ নিয়ে যাওয়া হয়।
আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা আদালাহ জানিয়েছে, আটক স্বেচ্ছাসেবকদের বিষয়টি সম্পর্কে খুব সামান্য তথ্য দেওয়া হয়েছে আর এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে তাদের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হয়েছে কিনা। সংগঠনের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তারা আরও বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় মানবিক সহায়তা বহনকারী নৌযানকে আটক করা যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বনেতাদের কাছে আবেদন জানিয়েছে, অবিলম্বে অপহৃত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের মুক্তি দেওয়া হোক।
এদিকে, কিছু জাহাজের পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফরাসি পতাকাবাহী মিকেনো জাহাজটি ফিলিস্তিনি জলসীমায় প্রবেশ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে, তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে, পোল্যান্ডের পতাকাবাহী ম্যারিনেট এখনো স্টারলিংকের মাধ্যমে যোগাযোগে রয়েছে, যেখানে ছয়জন যাত্রী অবস্থান করছেন।
নির্ধারিত তথ্য অনুযায়ী, যে সকল জাহাজ নিশ্চিতভাবে ইসরায়েলের হাতে আটক হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ফ্রি উইলি, ক্যাপ্টেন নিকোস, ফ্লোরিডা (সব পোল্যান্ডের পতাকাবাহী), অল ইন (ফ্রান্স), কারমা, অক্সিগোনো (পোল্যান্ডের পতাকাবাহী), মোহাম্মদ ভাহর (নেদারল্যান্ডস), জেনো ও ওটেরিয়া (ইতালি), গ্র্যান্ডে ব্লু, হুগা, অরোরা (সব পোল্যান্ড ও ইতালির পতাকায়) এবং আরও কিছু জাহাজ।
অপরদিকে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া জাহাজের মধ্যে রয়েছে মিয়ামিয়া, ভ্যাংলেইস, পাভলস, ওয়াহু, ইনানা, মারিয়া, আলাকাতালা, মেটেক, মাংগো, আদাজিও, আহেদ তামিমি, অস্ট্রাল, আমস্টারডাম, ওহওয়াইলা, সেলভাগিয়া, কাতালিনা, এসত্রেলা, ফেয়ার লেডি ইত্যাদি।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলেছে, ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙা এবং গাজায় চলমান গণহত্যার অবসান তাদের মূল লক্ষ্য। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের দমননীতি কেবল তাদের শক্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সংগঠনটি সব দেশ ও আন্তর্জাতিক সমাধানকারীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যেন এসব অপহরণ মুক্তি পায় এবং মানবিক সহায়তা অবাধে চলতে পারে।