শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য আহমদ রফিকের প্রতি শত শত মানুষ। শনিবার (অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে গেলে সেখানে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রেমী মানুষজন দল বেঁধে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি শহীদ মিনারে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত জনতার উৎসাহের কারণে সঙ্গতিহীনভাবে ঘিরে ধরে তাদের। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তার অবর্তমানে তারই letzten ইচ্ছে অনুযায়ী, মরদেহ বারডেম হাসপাতাল (ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ) দান করা হবে বলে জানানো হয়েছে ‘আহমদ রফিক ফাউন্ডেশন’ থেকে। এই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে তার মরদেহ ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। তাতে চিকিৎসাশিক্ষা ও গবেষণার কাজে বিশেষ সুবিধা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং বুধবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক, তবে জীবনভর তিনি ছিলেন গবেষক, সাহিত্যিক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ। তিনি দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তার অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক সহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি দিয়েছে। আহমদ রফিকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার স্ত্রীর মৃত্যু ২০০৬ সালে হয়, তবে তার কোনও সন্তান নেই। কবিতা, প্রবন্ধ, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও গবেষণার মাধ্যমে তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসবিদ ও গবেষক হিসেবে তিনি দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ২০১৯ থেকে তার দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে এবং পরে প্রায় সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর শারীরিক পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের স্বীকৃতির অংশ হিসেবে দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ তার চিকিৎসা ও রাষ্ট্রীয় সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় তার দুটি বই প্রকাশিত হয়, একটি সময় প্রকাশন থেকে ‘ভারত-পাকিস্তান বাংলাদেশ কথা’ এবং আরেকটি ‘শিল্প-সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য’ প্রবন্ধসংগ্রহ। এই কিংবদন্তি ব্যক্তি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনন্য অবদান রেখে গেছেন।