গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে মোট ৪৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১৭ জন আর আহত হয়েছেন ৬৮২ জন। নিহতের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬৩ জন এবং শিশু ৪৭ জন। এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে, যা এই মাসের সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির এক বিস্তারিত চিত্র উপস্থাপন করে।
প্রতিবেতনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাসজুড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি, যেখানে ১৫১টি ঘটনায় ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট নিহতের প্রায় ৩৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৩.৮৫ শতাংশ। পাশাপাশি, পথচলা সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন ১১২ জন, যা মোট নিহতের প্রায় ২৭ শতাংশ। যানচালকদের মধ্যে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন, যা ১৩.৪২ শতাংশ।
অন্যদিকে, এই সময়ে ১৭টি নৌ দুর্ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটে ২৯টি, এতে ২৭ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুর্ঘটনা প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় ও স্থানেঘটেছে। সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩০ শতাংশ দুর্ঘটনা সকালবেলা, ২৩.৫৪ শতাংশ রাতে, দুপুরে ২০.৬২ শতাংশ, বিকেলে ১০.৭৬ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৭.১৭ শতাংশ এবং ভোরে ৭.৮৪ শতাংশ।
ভূগোলের ভিত্তিতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, যেখানে মোট ১২৮টি দুর্ঘটনায় ১২৪ জন নিহত হয়েছেন। এরপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার যথাক্রমে উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রাম জেলা সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে, যেখানে ৫২টি দুর্ঘটনায় ৪৫ জনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে মাগুরায়।
নিহতদের মধ্যে স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, সাংবাদিকতা, ব্যবসা, শ্রমিক, কৃষি প্রভৃতি পেশাজীবীর সংখ্যাও উল্লেখ্য। জনপ্রিয় পেশার মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন, খারাপ রাস্তাঘাট, অবাধ বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, অনুসরণীয় ট্রাফিক আইন অমান্য, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনা।
উপসংহারে, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনা কমাতে নানা সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, চালকদের কর্মঘণ্টা ও বেতন নিয়ন্ত্রণ, সড়ক ভালো করার জন্য সার্ভিস রোড ও ডিভাইডার নির্মাণ, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে কার্যকর করা, রেল ও নৌপথের উন্নয়ন, চাঁদাবাজি বন্ধ ও টেকসই পরিবহন অবকাঠামো বাস্তবায়ন। এই সব উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা আরও উন্নত করা সম্ভব বলে তারা আশা প্রকাশ করেছে।