ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী পাকিস্তানকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ সমর্থন বন্ধ না করে, তবে তাদের ভৌগোলিক অবস্থান হারাতে হতে পারে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা গেছে, রাজস্থানের অনুপগড়ে একটি সেনা পোস্টে বক্তৃতা দিতে গিয়ে দ্বিবেদী এমন কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুর ১.০-তে আমাদের যে সংযম দেখিয়েছিলাম, এবার তা বজায় রাখব না। এবার আমি এমন কিছু করব, যা পাকিস্তানকে ভাবতে বাধ্য করবে তারা কি আসলে তাদের ভূগোলের স্থান রাখতে চায় কি না। যদি তারা সত্যিই তাদের স্থান ধরে রাখতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করতে হবে।’ এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ কথার পাশাপাশি জানানো হয় যে, শীর্ষ জেনারেল শুধু হুঁশিয়ারিই দেননি, বরং সৈন্যদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা হলে আপনাদের শিগগিরই একটি সুযোগ দেওয়া হবে। শুভকামনা।’ এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, দ্বিবেদীর এই হুঁশিয়ারি এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংয়ের আগের দিনকার মন্তব্যের পর আসে। ভারতের সেনাপ্রধান আরও বলেন, অপারেশন সিন্দুরের সময় ভারতের লক্ষ্য ছিল নিরীহ মানুষকে ক্ষতি না পৌঁছানো এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস না করা। তবে তারা সন্ত্রাসীদের আস্থান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মূল পরিকল্পনাকারীদের নির্মূলের উপর জোর দিয়েছে। উল্লেখ্য, এই অভিযানে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর F-16 এবং JF-17 যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করেছে ভারতের বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং। তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষ থামানোর জন্য পাকিস্তানই বাগডাক দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র নয়। এছাড়া, তিনি বলেন, ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংসের পাকিস্তানি অভিযোগ ভেতর থেকে মিথ্যা প্রচার, যা সত্য নয়। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানই যুদ্ধবিরতির আবেদন করেছিল, যা স্পষ্ট করে দেয়, ১০ মে সংঘর্ষ বিরতিতে আসার পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ নয়, বরং পাকিস্তানের পক্ষ থেকেই শান্তির আহ্বান ছিল। ভারতের এই বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের অধিনস্ত জবাবে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি নিশূলভাবে আঘাত করে। এতে বিশ্ব দেখেছে ভারতের শক্তি ও নির্ভুলতা, যা তাদের সামর্থ্য প্রমাণ করে। এচিফ মার্শাল আরও বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুরের সময় অসংখ্য নিরীহ প্রাণের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে থাকলেও, আমরা লক্ষ্যভেদে সফল হয়েছি। আমরা ৩০০ কিলোমিটার দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছি, যার পর পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেছে।’ তিনি ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন এবং জানান, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ১০০ ঘণ্টার সংঘাতে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সফলভাবে প্রতিহত বা ধ্বংস করেছে। তবে গত চার মাস ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলছেন, তিনি ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জাতিসংঘের মহাসম্মেলনে, বিভিন্ন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠকে, এমনকি গত বুধবার মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত এবং পাকিস্তান লড়াই করছিল। আমি দু’পক্ষকে ফোন করে শান্তির পথ দেখিয়েছি এবং বর্তমানে বাণিজ্য ইস্যু ব্যবহার করে এই সংঘাত বন্ধের চেষ্টা চলছে।’ প্রসঙ্গত, গত মে মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলার পর দুই দেশ দ্রুত যুদ্ধের ঝুঁকিতে পৌঁছে গিয়েছিল। উভয় দেশের আকাশে হামলা চালানো হয়েছে, বহু যুদ্ধবিমান ভুপাতিতের দাবি ওঠে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপ এবং উভয় দেশের মধ্যে বোঝাপড়ার ফলস্বরূপ ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।