গত ৩৬ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে নেপালে ভয়াবহ ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে সড়ক যোগাযোগ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে; বহু সেতু ভেঙে গেছে এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইতিমধ্যে কমপক্ষে ২২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানী কাঠমান্ডুর আর্মড পুলিশ ফোর্সের সদর দপ্তর জানিয়েছে, নিহতের মধ্যে কোসি প্রদেশে ৩৬ জন ও মধেশে ৩ জন রয়েছেন। এখনও দেশজুড়ে ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন।
ভূমিধসের কারণে নিহতের অধিকাংশই ইলামে, যেখানে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া উদয়পুরে বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় দুজনের মৃত্যু ও একজনের আহত হওয়ার খবর ও পাওয়া গেছে। খোটাংয়ে বজ্রপাতের ফলে একজনের মৃত্যু ও তিনজন আহত হয়েছেন। ভোজপুরে বজ্রপাতে আরও দুজন আহত হয়েছেন। পঞ্চথরে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন।
মধেশের রানিরহাটে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়। অন্যত্র, বরায় একজন, রাসুয়ারায় চারজন এবং কাঠমান্ডুতে নদীতে ভেসে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মাকোয়ানপুরে বজ্রপাতে একজন আহত হয়েছেন।
নেপাল পুলিশ বলছে, শনিবার থেকে বন্যার স্রোতে ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র শান্তি মহাত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন, ভূমিধস ও বন্যার কারণে বেশ কিছু মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে বা ভেঙে গেছে। এতে শত শত যানবাহন ও যাত্রী আটকা পড়েছেন। কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের মুখপাত্র রিঞ্জি শেরপা জানিয়েছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো অনেকটাই ব্যাহত হলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।
দক্ষিণ-পূর্ব নেপালের কোসি নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে, যা প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোসি নদীর প্রবাহ স্বাভাবিকের দ্বিগুণের বেশি। সকল স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং ভারী যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
পাহাড়ে ঘেরা রাজধানী কাঠমান্ডুতে কয়েকটি নদী সড়কগুলো প্লাবিত করেছে। অনেক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে, ফলে শহরটি দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই বর্ষাকালে ভূমিধস ও বন্যা ঘটে থাকে, যা হাজারো মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।