জনপ্রশাসনের সংগঠন ও কার্যাপদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে গঠিত হয়েছে নতুন সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস), যা দেশের বিভিন্ন ক্যাডার থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ তৈরি করবে। এই সার্ভিসের অধীন থাকবে উপসচিব থেকে শুরু করে সচিব পদপর্যায়ের সকল কর্মকর্তার পদ।
এছাড়াও, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদনাম পরিবর্তনসহ প্রশাসনিক কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কার আনা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চলমান প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র। জানিয়েছে, এই সংস্কারের ফলে গঠিত হবে নতুন প্রশাসনিক কাঠামো, যা বাংলাদেশের সাধারণ প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
শোনা যাচ্ছে, ডিসির পদবি পরিবর্তন করে এখন থেকে তাকে বলা হবে ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কমিশনার’, আর ইউএনও’র পদনাম হবে ‘উপজেলা কমিশনার’। এসব পরিবর্তন দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে ন্যাশনাল ইমপ্লিমেন্টেশন কেমিটি (নিকার), যাতে এই প্রক্রিয়াগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত হয়।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী,এসইএস গঠনের জন্য বিভিন্ন সার্ভিসের কর্মক্ষম মেধাবী ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নির্বাচন করা হবে। এই সার্ভিসে নিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা থাকবে, যিয়ে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য মূল যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। আগামী দিনে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এই পরীক্ষার জন্য সুপারিশ পাঠানো হবে সরকারকে।
প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে, সব কর্মকর্তাদের একটি সম্মিলিত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। এতে, কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে তাদের পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে। বিশেষায়িত সার্ভিসের কর্মকর্তারা ভিন্নভাবে এই ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়বেন না।
বর্তমানে, উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে থাকা কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে। সচিব, মুখ্যসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবও এই সার্ভিসের অংশ হয়ে যাবেন। বিশেষ করে, একটি মন্ত্রিসভার কমিটি এর নেতৃত্বে উচ্চপদে পদোন্নতি প্রদান করা হবে।
নতুন এই সিস্টেমে, সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, জেলা কমিশনার (বর্তমানে জেলা প্রশাসক), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনার পদে নিয়োগ হবে। এই পদের সঙ্গে এসইএস কর্মকর্তাদের সমতুল্য মর্যাদা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পদটি পরিবর্তন করে ‘অতিরিক্ত জেলা কমিশনার (ভূমি ব্যবস্থাপনা)’ করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসনের কার্যক্রমকে আরও দক্ষ, জনমুখী ও জবাবদিহিমূলক করতে দুই শতাধিক সংস্কারমূলক প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। এ সমস্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার প্রশাসনিক কার্যপদ্ধতিকে যুগপূর্য ও যুগোপযোগী করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।