অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নতুন দুইটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই দুই চ্যানেল হলো ‘নেক্সট টিভি’ এবং ‘লাইভ টিভি’। নেক্সট টিভির লাইসেন্স লাভ করেছেন মো. আরিফুর রহমান তুহিন, আর লাইভ টিভির জন্য লাইসেন্স পেয়েছেন আরিফুর রহমান নামে একজন প্রবাসী।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা জানান, নতুন টিভি অনুমোদনের প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হয়েছে। তবে চ্যানেল দুটির অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি এবং এখনো প্রক্রিয়াধীন।
নেক্সট টিভির লাইসেন্সপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান তুহিন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক। তিনি ২০২৪ সালে ডিসেম্বরে এই দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এর আগে তিনি একজন ইংরেজি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। এনসিপি গঠিত হওয়ার পর তিনি দলের যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্বে আসেন।
অপরদিকে, লাইভ টিভির লাইসেন্সপ্রাপ্ত আরিফুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন প্রায় ছয় বছর আগে। ছাত্রজীবনে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি এনসিপির সদস্য ছিলেন, তবে দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না।
তাদের টিভি চ্যানেল চালানোর জন্য আর্থিক সক্ষমতা আছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তবে কতটা যোগ্যতা বা রূপায়ন হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে চ্যানেল দুটির অনুমোদনের পেছনের কারণ জানতে চাওয়া হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অতীতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালীন সাড়ে ১৫ বছরে প্রায় ২৮টি টেলিভিশন লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এসব চ্যানেলের মালিকেরা প্রায়ই সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সেই ধারা অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারও নতুন দুটি টিভির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে।
নেক্সট টিভি কর্তৃপক্ষের কাছে এই অনুমোদন দেয়া হয় গত ২৪ জুন। এই চ্যানেলটি ‘৩৬ মিডিয়া লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন এনসিপির যুগ্ম চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান তুহিন। অফিসের অবস্থান পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার করাতিটোলা লেনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই চ্যানেলের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন বগুড়ার বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাবেক সংসদ সদস্য এ.কে এম. হাফিজুর রহমানের ছেলে এ.কে এম গোলাম হাসনাইন, যিনি সৌদি আরবের প্রবাসী এবং সেখানে বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
অন্যদিকে, লাইভ টিভির অনুমোদন পেয়েছে ১৪ জুলাই। এর মালিকানা ‘মিনার্ভা মিডিয়া লিমিটেড’ নামক প্রতিষ্ঠানের। অফিসের ঠিকানা গুলশান ১ নম্বর সড়কের ১৪৩ নম্বর ভবন।
আরিফুর রহমান জানান, তার কাছ থেকে আরও কিছু কাগজপত্র ও কাজ বাকি থাকায় তিনি আশা করছেন, আগামী বছর থেকেই সম্প্রচারে যেতে পারবেন। তিনি যোগ করেন, তার সঙ্গে রয়েছেন এক বিনিয়োগকারী, যিনি টেলিভিশন চালানোর জন্য অর্থের যোগান দিচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন চ্যানেল দুটির পরিচালনায় একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক কাজ করছেন, যিনি একে অপরাধ ও বাণিজ্যিক দিক থেকে বেশ অভিজ্ঞ। মূলত এই ব্যক্তি টেলিভিশন দুটির স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এছাড়াও, অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদন দিয়েছে একটি আইপি টিভি ‘চেঞ্জ টিভি প্রেস’ নামে। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন।
বর্তমানে দেশে অনুমোদিত ৫০টির বেশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র ৩৬টি পূর্ণ সম্প্রচারে রয়েছে, আর বাকিগুলো সম্প্রচারে আসার অপেক্ষায়। এছাড়া ১৫টি আইপি টিভি এখন সক্রিয় রয়েছে, যেগুলোর অনুমোদনও চলমান। ভবিষ্যতে আরও কিছু টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য অনুমোদনের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।