প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বই ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ থেকে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন একটি গভীর এবং ক্ষণিকের হৃদয়স্পর্শী অংশ নিজে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। এই বইটি হুমায়ূন আহমেদ ক্যানসার আক্রান্ত অবস্থায় নিউইয়র্কে চিকিৎসা নিতে থাকাকালীন লেখেন, যেখানে তিনি মানসিক অসুস্থতা ও বিকৃত মানসিকতার মানুষের নির্মমতা ও মনোবল ভেঙে দেওয়ার দিকগুলো অকপটে তুলে ধরেছেন।
রবিবার (৫ অক্টোবর) শাওন তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন কীভাবে তার স্বামী হুমায়ূন আহমেদের অসুস্থতার সময় এক ব্যক্তি তাকে অপমানজনকভাবে প্রকাশ্যে বিদ্রুপ করেছিলেন। ওই ব্যক্তি লিখেছিলেন, ‘তোমার উচিত শিক্ষা হয়েছে। আমি খুশি যে আল্লাহ তোমার স্বামীকে ক্যানসার দিয়ে তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ এই ধরনের মন্তব্যের ফলে শাওন তার স্বামীর প্রতি দারুণ আলোচনার সৃষ্টি হয়।
একদিন শাওন লক্ষ্য করেন, তার স্বামী চোখের পাতায় অশ্রু নিয়ে কম্পিউটারের ফেসবুক ফিডে তাকিয়ে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘এত সমস্যা কী?’ স্বামী বললেন, ‘কিছু না, মন খারাপ হয়েছে।’ শাওন বলেন, ‘আমি তোমার মন খারাপ অতিক্রম করতে পারি। বলো কী হয়েছে?’ স্বামী বললেন, ‘তুমি জানো না, কতজন আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এই মন্তব্য করেছে। কেউ লিখেছিল, আমার জীবনে আগে এটি হয়েছে, হয়তো আরও হবে।’ এই মন্তব্যগুলো হুমায়ূন আহমেদকে ভেঙে দিয়েছিল, বিশেষ করে যখন তার মেয়ে লীলাবতী মৃত্যুর পরও তাকে এমন অপমানজনক মন্তব্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
তবে, শাওন উল্লেখ করেছেন, তার স্বামী একবার তার মনোভাব পরিবর্তনে চেষ্টা করেছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক মানুষ মানসিক রোগে ভুগছে, তাদের নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই। আমরা তাদের বাইরে রাখতে পারি না। তবে আমাদের মনোবল রাখতে হবে। তোমার ফেসবুকে হাজারো মানুষ শুভকামনা ও সুস্থ মনোভাব প্রকাশ করছে। একবার এক ব্যক্তির সাথে তুলনা করে তিনি বলেছিলেন, তিনি কাবা শরিফে রয়েছেন এবং দোয়া করছেন যেন তার জন্য অনেক সুখ এবং শান্তি আসে।’
শেষে, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর জীবনের এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন যেখানে তিনি বিকৃত মানসিকতার একজন যুবকের মুখোমুখি হন। বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের আশপাশে বিকৃত মনোভাবাপন্ন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। একবার আমি এক যুবকের সাথে দেখা করছিলাম, তার চোখে অপ্রতিরোধ্য এই ভাবনাটা ছিল যে, ‘তোমার লেখা আমার জঘন্য লাগে’। এই কথার জন্য সে যেহেতু সাহস করে কথা বলেছে, আমি খুশি হয়েছি। তিনি আরও বললেন, ‘আমি চাই আপনি শীঘ্রই মারা যান’। তখন, আমি তাকে বলি, ‘আমি আশা করি, এবং প্রার্থনা করি, আপনার জীবন দীর্ঘ ও অর্থপূর্ণ হোক’।’ এইভাবেই হুমায়ূন আহমেদের জীবন থেকে নানা স্মৃতি ও ভাবনা সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ হয়েছে এই বইয়ে।