গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় শুধুমাত্র সাধারণ মানুষই নয়, এখানে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা ও নিশানা হয়েছেন। এখন পর্যন্ত সোয়া দুই বছরেও ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করেছে অন্তত ২৫০ জন খতিব, ইমাম, দাঈ এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতা-কর্মী। এই সময়ের মধ্যে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে ৮৩০টির বেশি মসজিদ এবং ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আরও ১৮০টির বেশি মসজিদ। আশ্চর্যের বিষয়, এই হামলার খপ্পরে পড়েছে খ্রিস্টান উপাসনালয়ও। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আক্রমণে কমপক্ষে ২৩৩জন মুসলিম ধর্মীয় নেতা এবং ২০জন খ্রিস্টান ধর্মযাজক নিহত হয়েছেন। মূলত, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোই মূল লক্ষ্য ছিল এই হামলার উদ্দেশ্য।
গাজার সরকারি গণমাধ্যমের পরিচালক ইসমাইল আস-সাওয়াবিতা প্রকাশ করেন, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনিদের মানসিক ও নৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হত্যা, মসজিদ ও গির্জা উড়িয়ে দেয়া এবং নাগরিক স্থাপনা ধ্বংস করেই এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, ধর্মীয় নেতারা জাতির নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদের প্রতীক। তাদের হত্যা করে ইসরায়েল দেশীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনা স্তব্ধ করতে চাইছে।
প্রখ্যাত তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় মারা গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় নেতা, তাদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনের ধর্মবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও আল-আকসা মসজিদের খতিব ইউসুফ সালামা, গাজারের জনপ্রিয় আলেম ও বক্তা ওয়ায়েল আজ-জারদ, এবং কোরআন শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক ওয়ালিদ আওয়াইদা।
গাজার সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনী এখনো পর্যন্ত ৮৩৫টি মসজিদ পুরোপুরি ধ্বংস করেছে এবং আরো ১৮০টির ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পাশাপাশি গাজার তিনটি ঐতিহাসিক গির্জায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বহু নারী ও শিশু এই হামলার শিকার হয়েছে। এই গির্জাগুলোর মধ্যে রয়েছে রোমান ক্যাথলিক সেন্ট পারফিরিয়াস, ক্যাথলিক হোলি ফ্যামিলি চার্চ ও ব্যাপটিস্ট ইভানজেলিকাল চার্চ।
ইসমাইল আস-সাওয়াবিতা বলেন, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও উপাসনালয়ের ওপর এই হামলা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটিকে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেন তিনি।
দুই বছর ধরে চলমান এই গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে, পূর্বেও বলশেভিক শক্তির আরাধনায় গাজাতে এখনো ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি চিৎকার করে আজান দিচ্ছেন অনেক মানুষ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে গাজায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৬৭ হাজার ১৩৯ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন। অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া, দুর্ভিক্ষ ও ওষুধের সংকটে প্রাণ গেছে আরও ৪৬০ জনের, যাদের মধ্যে ১৫৪ জন শিশু। তবে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও গাজার ধ্বংসস্তূপে এখনও কেউ কেউ আল্লাহু আকবার বলে আজান দিচ্ছেন, যেন এই হতাহত মানুষের অস্থিরতাকে আশ্রَয় দেন। সূত্র: আল জাজিরা।