আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলা অভিযানে গাজার মানুষের দুর্ভোগ তুলে ধরতে গিয়ে গ্রেফতার হন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। ফিরে এসে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ইসরায়েলি সেনারা তার সাথে অমানবিক আচরণ করেছে এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্র অপমানের সঙ্গে মাটিতে ছুড়ে ফেলেছে।
শহিদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, যখন তারা তাকে আটক করে, তখন তাদের লক্ষ্য ছিল তার পাসপোর্ট। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সেটি দেখে এবং সেটি অপমানজনকভাবে মাটিতে ফেলে দেয়। তিনি বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট দেখে তারা খুব ক্ষেপে গিয়েছিল আর এরপর তা এভাবে মাটিতে ফেলে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজা এখনো মুক্ত হয়নি। গাজার মানুষ আজও ইসরায়েলীর আক্রমণের শিকার। তাদের উপর বর্তমানে নির্যাতন চলছে। এই নির্যাতন বন্ধ না হলে আমাদের সংগ্রামও শেষ হবে না।’
দেশে ফিরে শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছিলেন শহিদুল আলম।
তিনি বলেন, ‘আজ আমি ফিরে এসেছি, কিন্তু অনেক কেউ যেতে পারেনি। অনেক যোগ্য ব্যক্তিও ছিল जिन्होंने আমাদের সাথে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমরা তাদের নিতে পারিনি। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, ভবিষ্যতেও আমরা হাজারো ফ্লোটিলা নিয়ে গাজায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত ফিলিস্তিনের মুক্তি না আসে, আমাদের এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’
শহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসাই তাকে ফিরিয়ে এনেছে। পাশাপাশি, তুরস্কের সরকার এবং তাদের এয়ারলাইন্সের সহযোগিতাই তার ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে—এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিপদজনক পরিস্থিতিতে কী ধরনের বাধার মুখে পড়েছেন, তা জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা ফ্লোটিলাটি ছিল সবচেয়ে বড়। এটি মূলত সংবাদকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বরাদ্দ ছিল। কারণ, ইসরায়েলি আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে এই দুই দল ছিল। তাই, তাদের নিরাপত্তার জন্য এই বড় ফ্লোটিলা প্রস্তুত করা হয়েছিল।’
শহিদুল আলম উল্লেখ করেন, ‘আমার শরীরের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তার চেয়েও বেশি কষ্টের ছিল যখন আমাদের দেশের পাসপোর্ট মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেছিল। এই অপমানের যথাযথ বিচার আমাদের একান্তই চাই। যেন কেউ এইভাবে আমাদের অপমান করে যেতে না পারে, এ জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।’
শুক্রবার রাত ৪টা ৫৫ মিনিটে, টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এর আগে, শুক্রবার বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৫টা ২৫ মিনিট) তার বহনকারী ফ্লাইট ইসরায়েল থেকে ইস্তাম্বুলে নামলে, ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। পরে, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আবার টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তিনি ঢাকা উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতাকে রোধের এবং গাজায় ইসরায়েলি নৌ অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে গাজা অভিমুখে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ নামক একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজার’ নামের আরও আটটি নৌযানও ওই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল। মোট নয়টি নৌযানের এই দলে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক এবং অধিকারকর্মীরা ছিল।
অভিযানের সময়, গত বুধবার, ইসরায়েলি সেনারা আক্রমণ করে সব অধিকারকর্মী ও নাবিককে আটক করে। পরে অনেককে, সহ শহিদুল আলমসহ, ইসরায়েলের কাঠগড়ার কেফজিয়েত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার পর থেকে তিনি এবং অন্যান্য আটক ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য বাংলাদেশের সরকার দীর্ঘ দিন থেকে জেনের, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে কূটনৈতিক প্রয়াস চালিয়ে আসছে।
আটক শেষে, শহিদুল আলম মুক্তি লাভ করে, এবং তিনি ইসরায়েল থেকে তুরস্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তার মুক্তি ও ফেরার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।