সেপ্টেম্বরে দেশের মোট মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৩৬ শতাংশে। এর আগে আগস্ট মাসে এটি কিছুটা কমে ৮.২৯ শতাংশ ছিল। এই মাসে দেশের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবিকার ওপর চাপ বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও দেশের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় সতর্ক সবাই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত মাসিক ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮.৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এই হার মানে, যদি একটি পণ্যের দাম ১০০ টাকায় চলে, তাহলে এখন সেটি কিনতে হবে ১০৮ টাকা ৩৬ পয়সায়, যা আগের মাসের চেয়ে বেশি।
মূল্যস্ফীতি সাধারণত এক ধরনের করের মতো, যেখানে জিনিসপত্রের দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে এবং মানুষের আয়ের হার না বাড়লে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে যায়। এর ফলে মানুষকে ধার দেনা করে খেতে হবে, বা খরচ কমিয়ে দিতে হবে খাদ্য, কাপড়-চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাতে। যদি মজুরি বা আয় বৃদ্ধি কম হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে এবং আসলে তাদের বাস্তব আয় কমে যায়।
গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের বেশি, আর এই অর্থবছরের জন্য সরকারি লক্ষ্য রাখা হয়েছে ৬.৫ শতাংশের মধ্যে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিও গ্রহণ করেছে। তবে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্য ছিল গড় মূল্যস্ফীতিকে ৬.৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা। কিন্তু এখনো এই লক্ষ্যমাত্রার ওপর থাকায়, তা পুরণ করা কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭.৬৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগস্টে ছিল ৭.৬ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ৮.৯৮ শতাংশে গিয়েছে। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে, দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের ভোগাচ্ছে এমন উদ্বেগ বাড়ছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। ভারতের বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ২.০৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫.৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১.৫ শতাংশ, নেপালে ১.৬৮ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২.২ শতাংশ, মালদ্বীপে ৪.৬ শতাংশ এবং ভূটানে ৩.৬ শতাংশ।
বিশেষ করে, এই মাসে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি বেড়েছে। গ্রাম এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৮.৪৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শহরে তা ৮.২৮ শতাংশ। এডিবি ভবিষ্যদ্বাণী করছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট মূল্যস্ফীতি থাকবে ৮ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু তারা সতর্ক করে বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটি হবে উচ্চতম হার।
সব মিলিয়ে, দক্ষিণ এশীয় অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে, তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ কিছু দেশে খাদ্য ও জ্বালানি খাতে মূল্যস্ফীতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর অভিজ্ঞতা shows that কঠোর মুদ্রানীতি, সুষ্ঠু বাজার তদারকি ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলে মূল্যস্ফীতিকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।