বিশ্বকাপের টিকিটের অর্থাৎ খেলা দেখার আধিকারিক পত্রে যেন সোনার হরিণ। তবে সেটার প্রাপ্যতা পড়ে সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিটের দাম বাড়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে তার আরও বাড়তি দামের বিষয়টি, যা এতটাই বেশি যে, ২০২২ বিশ্বকাপের চেয়ে ১০ গুণ বেড়ে গেছে। এর ফলে, যেখানে আগে কিছু মানুষের জন্য সবচেয়ে দামী আসনে খেলা দেখা সম্ভব ছিল, এবার সাধারণ দর্শকদের জন্য কম দামের আসনেও গুণতে হবে বেশি টাকা। এসব তথ্য দেখিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এটি হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপের তুলনায় এবারের টিকিটের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে ‘ক্যাটাগরি ৪’ বা সাধারণ দর্শকদের জন্য নির্ধারিত টিকিটের দাম প্রায় দশগুণ বেড়েছে। কাতারে উদ্বোধনী ম্যাচের সস্তা টিকিটের দাম ছিল ৫৫ ডলার, কিন্তু ২০২৬ সালের জন্য এই দাম দাঁড়িয়েছে ৫৬০ ডলার। অর্থাৎ, সবচেয়ে সস্তা টিকিটের দামই এখন আগের আসরের সবচেয়ে দামী ‘ক্যাটাগরি ১’ টিকিটের কাছাকাছি।
এছাড়া গ্রুপ পর্বের টিকিটের দামও নয়গুণ বেড়েছে। যেখানে আগে সেটি ছিল মাত্র ১১ ডলার, এখন দাঁড়িয়েছে ১০০ ডলার। ফাইনাল ম্যাচের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি বেশ নজরকাড়া। ২০২২ সালে ফাইনালের সবচেয়ে সস্তা টিকিটের মূল্য ছিল ২০৬ ডলার, আর এবারে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৩০ ডলারে। এর মানে, এই বছর সবচেয়ে সস্তা আসনের মূল্য আগের সবচেয়ে দামী আসনের কাছাকাছি বা তার চেয়েও বেশি হয়ে গেছে।
এই বিশাল টিকিটের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ফুটবলপ্রেমীরা বলছেন, ফিফা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখানে সাধারণ দর্শকের জন্য মাঠে গিয়ে খেলা দেখার সুযোগ একেবারে কমে এসেছে। কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন, ‘এমন দামে বিশ্বকাপ এখন কেবল ধনীদের বিনোদন।’
এছাড়া নতুন ‘ডাইনামিক প্রাইসিং’ নীতি এতে যুক্ত হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, যে ম্যাচে চাহিদা বেশি, সেই ম্যাচের টিকিটের দাম আরও বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যবস্থা মূলত উত্তর আমেরিকার বাজারে চালু, যা শেষ মুহূর্তে কম দামে টিকিট পাওয়ার সুবিধা দেবে, তবে বিদেশি ভক্তদের জন্য এটি তুসম্পন্ন হবে। কারণ, তাঁরা আগে থেকে ভ্রমণ এবং দর্শকের পরিকল্পনা না করে হঠাৎ টিকিট কিনতে পারবেন না।
ফিফা আবার টিকিটের পুনর্বিক্রিতে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষ থেকেই ১৫ শতাংশ ফি নেবে, যা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্বকাপের ফাইনালের সাধারণ টিকিটের দাম এখন শুরু হচ্ছে ২০২০ ডলার থেকে এবং সর্বোচ্চ ৬৩৭০ ডলার পর্যন্ত। এখনও আতিথেয়তা বা হসপিটালিটি টিকিটের বিক্রি শুরু হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই সব দিক বিবেচনা করে, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আসর হতে চলেছে।