ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য এক সভা আয়োজন করে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, এ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ওসি মত কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের সভায় মূল লক্ষ্য ছিল অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সুনিশ্চিত করা। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। বর্তমান পরিস্থিতি নিরাপদ রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিত কৌশল গ্রহণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনের আনুষঙ্গিক কর্মকর্তা কোনওভাবেই আইনবহির্ভূত কাজ না করতে নির্দেশনা পেয়েছেন। নিরাপত্তা জোরদার করতে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরাও ব্যবহার করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের সম্ভাব্য দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হচ্ছে, যাতে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে।
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচনী পুলিশ সদস্যদের প্রায় দেড় লাখ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণ ১৩০টি ভেন্যুতে ২৮ বাচে তিনদিন করে চলবে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে একটি ব্যাচের (৬,৫০০ জন) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও এক ব্যাচের (৬,৫০০ জন) প্রশিক্ষণ চলছে। একই সঙ্গে, আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের জন্য প্রাক-নির্বাচনী প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ ৮৫ হাজার সদস্যকে অস্ত্রসহ ও নিরস্ত্র হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এগুলোর মাধ্যমে তারা নির্বাচনের সময় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানাচ্ছেন, এবারের নির্বাচনে বিজিবি ১১০০ প্লাটুনে ৩৩ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ইতোমধ্যে ৬০% প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে, আর শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পাশাপাশি, تقریباً ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনী সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়া, সীমানা পুন:নির্ধারণের সিদ্ধান্তে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিও আশাপ্রদ ও শান্তিপূর্ণ। সরাসরি কোনও অস্থিরতা থাকুক তা না দেখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। ফ্যাসিস্ট দলের ঝটিকা মিছিলে আগের চেয়ে কম হলেও, তারা যাতে শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে না পারে, এর জন্য নানা ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে সবার সচেতনতা ও প্রস্তুতির কারণে সমসময়ের জন্য শান্তিপূর্ণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নিরাপত্তার পাশাপাশি, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু দুষ্কৃতকারীরা নয়, মাদকের গডফাদারদেরও আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। এই সম্পূর্ণ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি যথেষ্ট নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।