ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ আবারও গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন, এবং এ ঘোষণা যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তির একদিনেরও কম সময়ের মধ্যে এসেছে। তিনি বলেছেন, জিম্মি মুক্তির পর ইসরায়েল তাদের জন্য নতুন করে হামাসকে পরাজিত করার জন্য সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করবে। এই ঘোষণাকে সাধারণত নতুন সম্মত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট অভিপ্রায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, ‘জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে চুক্তির প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে, তারপরই ইসরায়েল হামাসের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করতে আবারও সামরিক পদক্ষেপ নেবে।’ তিনি আরও জানান, ‘জিম্মি ফেরত পাওয়ার পর ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে গাজায় হামাসের সব সন্ত্রাসী সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা, যা সরাসরি আইডিএফের (ইসরায়েলী সেনাবাহিনী) মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি যৌথ অভিযানে সম্পন্ন করা হবে।’
কাটজের মতে, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ ও হামাসের ক্ষমতা কমানোর উদ্দেশ্যেই এই চুক্তির মূল লক্ষ্য। তিনি আইডিএফ বাহিনীকে নতুন সামরিক অভিযান প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ঘোষণা তখন এসে পৌঁছেছে যখন কাতার, মিশর ও আমেরিকার মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তির একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল দুই বছরের ধ্বংসযজ্ঞ ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাটজের এই বক্তব্য খুব স্পষ্ট যে, ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী শান্তির পরিবর্তে সাময়িক বিরতিই হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কাটজের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মানবধিকার আইনের লঙ্ঘনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। কারণ, যুদ্ধবিরতি থাকাকালীন সময়ে নতুন আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া বা বড় আকারের হামলার ঘোষণা দেওয়া আইনী দিক থেকে অসঙ্গত।
গাজার পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। ইসরায়েলের টানা আক্রমণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। পাশাপাশি দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংসের কারণে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট তীব্র।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যা মামলার শুনানি চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেসামরিক জনগণের ওপর deliberately হামলা, অনাহার সৃষ্টি ও গাজামের অবকাঠামো ধ্বংসের প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মত, কাটজের এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেখিয়েছে যে, ইসরায়েল স্থায়ী শান্তি নয়, বরং তাদের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর ফলে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।