পাকিস্তান-আফগানিস্তানের অসংখ্য চ্যালেঞ্জে পূর্ণ সীমান্তে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। বুধবার ভোরে এই ভয়াবহ সংঘর্ষে দুই দেশের বেসামরিক নাগরিক ও সামরিক जवानসহ কমপক্ষে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর এবার নতুন করে উত্তেজনা বাড়ল, ফলে সীমান্তের শান্তি আবারও ভেঙে গেছে।
২০২১ সালে তালেবানের কাবুলের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এই সীমান্তে ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে। দু’দেশের সেনা ও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে লড়াই নিয়মিত হলেও, গত সপ্তাহে এই সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। দীর্ঘ ২৬০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই সীমান্তে বরাবরই উত্তেজনা চলে আসছে।
আফগান তালেবান গোষ্ঠী জানিয়েছে, বুধবার ভোরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী স্পিন বোলদাকজেলায় আক্রমণ চালিয়েছে, যাতে অন্তত ২০ তালেবান যোদ্ধা নিহত হন। পাশাপাশি, পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তে রাতভর সংঘর্ষে আরও ৩০ জনের বেশি আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান পক্ষের দাবি, চামান জেলায় তালেবানরা হামলা চালিয়ে চারজন পাকিস্তানি নাগরিককে আহত করেছে। এছাড়া, ওরাকজাই জেলার পাশাপাশি অন্যত্র পাকিস্তানের সেনাদের সাথে সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন সীমান্তরক্ষী নিহত ও ছয়জন আহত হন। সে জন্য পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে ৯ জঙ্গিরও মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে, কাবুলের দাবি, পাকিস্তান স্পিন বোলদাক এলাকায় হামলা চালিয়েছে, যা পাকিস্তান সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলছে, সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলে, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং আসলে আফগানিস্তানে জঙ্গিদের লুকানো চেষ্টা করছে তালেবান।
সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়া এই সংঘাতের পর, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও চলাচল অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। সীমান্তের বেশ কয়েকটি গেট এখন বন্ধ, যার ফলে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকা পড়েছে। আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সীমান্ত দিয়ে প্রতি বছর খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ চলে আসছে পাকিস্তান থেকে।
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে নানা মহলে। চীন ও রাশিয়া, দুই দেশই শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয়পক্ষের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, তিনি যদি চান তবে এই সংঘাতের অবসানে সহায়তা করতে পারেন।
এদিকে, এই উত্তেজনার মধ্যে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তানের চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত সফরে গেছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চলছে। নয়াদিল্লি বলেছে, তারা দ্রুত কাবুলে পুনরায় তাদের দূতাবাস চালু করবে। অন্যদিকে, আফগান তালেবান সরকারের কূটনীতিকরাও ভারত যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
তথ্যসূত্র: এএফপি, রয়টার্স।