জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যদি কোনও চুক্তি বা সনদ আইনি ভিত্তি না থাকে, তাহলে তার স্বাক্ষর কেবল লোক দেখানো এবং প্রতারণামূলক। তিনি শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলামোটরে নিজ দলের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম জানান, ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করেও এনসিপি রাজনৈতিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। ‘গতকালকের অনুষ্ঠানে যারা অংশ নিয়েছে, তারা হুকুমের অধীন বা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাইরে গেছে।’
গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন কমিশনের সদস্য এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশগ্রহণ করে স্বাক্ষর করেন।
আলোচিত এই সনদ চুক্তিও বলা হলেও, এই অনুষ্ঠানে আধুনিক ও বামপন্থি দলগুলোর মধ্যে কেবল চারটি দল — কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদসহ — অংশ নেয়নি। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি দল এই স্বাক্ষরে অংশ নেয়।
এনসিপির সই না করার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানানো হয়েছে যে, গত কয়েকদিন ধরে সরকারের পক্ষ থেকে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নানা আলোচনা এবং চাপ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সনদের স্বাক্ষরের শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই সনদের স্বাক্ষর কেবল আনুষ্ঠানিকতা। জনগণের প্রত্যাশা বা চাওয়ার কোনও প্রতিফলন তার মধ্যে দেখা যায়নি। এ ছাড়া, যদি কোনও আইনি ভিত্তি না থাকে, তাহলে এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হতে পারে।’
তিনি আরও জানান, ‘অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যদি সনদে স্বাক্ষর করে থাকে, আমাদের কোনও আপত্তি নেই; তারা সেটা আনুষ্ঠানিকতার জন্য করে। তবে এখন আমরা দাবি করছি, এটিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হোক।’
নাহিদ ইসলাম উল্লেখ করেন, পুরোনো ফ্যাসিস্ট পদ্ধতির সুবিধাভোগীরা আগের কাঠামো ধরে রাখতে নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক দল এই চুক্তিতে সমঝোতা করলেও, এনসিপি তা করেনি। তিনি আবারো জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা এই সনদে স্বাক্ষর না করে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। যারা গতকালের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে, তারা গণঅভ্যুত্থান বা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সনদটি আইনি দিক থেকে অপ্রতুল হওয়ার কারণে এবং সেটির বাস্তবায়নের ধারণা অস্পষ্ট থাকায় এনসিপি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি।’