দীর্ঘদিন ধরে চলছিল উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি হামলা এবং সংঘর্ষের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলো পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। কাতার ও তুরস্কের যৌথ মধ্যস্থতায় দুই দেশের প্রতিনিধিরা দোহায় একান্ত বৈঠক করে এবং_tlsay_{vt} একজন আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রোববার (১০ অক্টোবর) ভোরে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে নতুন এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়।
গতকাল শনিবার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা কাতার কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে দোহার শুল্কমোড়ের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছান এবং সেখানে এই দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নেন। স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা-কর্তারা দ্রুতই এই সংঘর্ষের অবসান ঘটানোর জন্য আলাপচারিতা চালান। আলোচনা শেষে দুই পক্ষই একে অন্যের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও কার্যকরভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবার সিদ্ধান্ত নেন। কাতার জানিয়েছে, এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে এবং প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে আবারও বিভিন্ন সময় এই বিষয় নিয়ে ফলোআপ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
পাকিস্তান খোদ দুই বছর ধরে আফগান সীমান্তে স্বাভাবিকের বাইরে উত্তেজনা চলাচ্ছে। তালেবান ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নেয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। গত দুই সপ্তাহে পরিস্থিতি রূপ নেয় সরাসরি সংঘর্ষের দিকে। সীমান্তে নিয়মিত গোলাগুলি, বিমান হামলা এবং সামরিক সংঘাতের কারণে হাজার হাজার মানুষ আহত ও নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আলোচনায় আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব, আর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান অভিযোগ করে আসছে, আফগানিস্তানের ভেতর থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী—তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) অন্তর্ভুক্ত—তাদের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং কাবুল সেই সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে। সীমান্তের প্রায় ২৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রম পাকিস্তানকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এসব হামলা বন্ধের জন্য পাকিস্তান বেশ কয়েকবার কাবুলকে সতর্ক করে এসেছে।
অভিযোগের এই পরিস্থিতিতে দুই সপ্তাহ আগে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাকিস্তান বিমান হামলা চালালে বেশ কিছু নাগরিক নিহত হন। এর পাল্টা করিয়ে সেদিক থেকে আফগান বাহিনী সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলা চালায়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
শুরুর দিকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান মোট ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তান আবারও আফগান সীমান্তে বিমান হামলা চালায়। যদিও তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর দাবি করেন, বাস্তবে দেখা যায় পাকিস্তান নতুন করে হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অভিযুক্ত দেশগুলো বলছে, তারা কোনোরকম সন্ত্রাসী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর আশ্রয় বা মদদ দিচ্ছে না, বরং পাকিস্তানই বারবার আফগান সীমান্তে আমাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। শুক্রবার আরও উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। আফগানিস্তান সংলগ্ন পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে তালেবান জঙ্গিরা আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে সাতজন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করে। এই ঘটনার পর পাকিস্তান কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সীমান্তে নতুন করে সামরিক পদক্ষেপ নেয়। পরিস্থিতি এখন আরও চরমে। সূত্র: রয়টার্স।