ক্রিকেট বিশ্বে আসছে এক নতুন যুগ, যার নাম হলো ‘টেস্ট টুয়েন্টি’—একটি অভিনব ক্রিকেট ফরম্যাট যা পারস্পরিক সংযুক্ত করবে টেস্টের গভীরতা ও টি–টোয়েন্টির গতি ও উত্তেজনা। এই ধারণাটির মূল প্রেরণা এসেছে ভারতের প্রখ্যাত ক্রীড়া উদ্যোক্তা গৌরব বাহিরওয়ানি থেকে, যিনি ‘দ্য ওয়ান ওয়ান সিক্স নেটওয়ার্ক’-এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট।
নতুন এই বৈচিত্র্যপূর্ণ ফরম্যাটে প্রতিটি দল দুই ইনিংস খেলবে, যেখানে প্রতিটি ইনিংস হবে ২০ ওভার, অর্থাৎ এক দিনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ শেষ হবে। এতে থাকবে টেস্টের মতো ফলাফল—জয়, পরাজয় বা ড্র—অর্থাৎ এটি হবে একদম নতুন এক ধরনের ক্রিকেট অনুষ্ঠান। লাল বলের গভীরতা ও ছোট ফরম্যাটের গতি একে অন্যের সঙ্গে মিশে গেছে, যা ক্রিকেটের নতুন এক স্বাদ এনে দিচ্ছে। এছাড়া, ডিজিটাল যুগের হিট দর্শকদের জন্যই এটি তৈরি, যা ক্রিকেটের ‘চতুর্থ ফরম্যাট’ হিসেবে পরিচিতি পাবে।
বিশেষ করে, এই ফরম্যাটে জটিল পরিকল্পনা, ধৈর্য্য ও টেকনিকের মূল্য আরও বাড়বে। ম্যাচটি চারটি ২০ ওভারের সেশনে বিভক্ত হবে, যেখানে সেশনের মাঝে বিরতিতে কৌশল সাজানোর সময় থাকবে। আয়োজকরা বলছেন, ‘টি–টোয়েন্টির সময়সীমায় টেস্টের ভাবনা’—এই ভাবনায় ব্যাটার এবং বোলার উভয়ের জন্যই আলাদা চ্যালেঞ্জ থাকবে, যেখানে দলীয় পরিকল্পনা এবং ধৈর্য্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই নতুন ফরম্যাটের পিছনে রয়েছে ক্রিকেটের দ-moiার বিশ্বপ্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব—এবি ডি ভিলিয়ার্স, স্যার ক্লাইভ লয়েড, ম্যাথিউ হেইডেন ও হরভজন সিং। ডি ভিলিয়ার্স মন্তব্য করেছেন, এটি একটি ‘উদ্দেশ্যপূর্ণ উদ্ভাবন’ যা তরুণ প্রজন্মকে নতুন স্বপ্নের পথে দৌড়ানোর সুযোগ করে দেবে। লয়েড মনে করেন, ক্রিকেট সবসময় পরিবর্তিত হলেও এই আধুনিক ফরম্যাট ক্রিকেটের শিল্প ও ছন্দে নতুন প্রাণ যোগ করবে। হেইডেন বলছেন, এটি দুটি যুগের সংযোগ যেখানে তরুণ দর্শকরা ক্লাসিক ক্রিকেটের স্বাদ পাবেন, তবে একই সঙ্গে আধুনিক উত্তেজনাও একই সঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন। হরভজন সিং বলেন, এটি ক্রিকেটের নতুন হৃদস্পন্দন, যা ঐতিহ্যকে এডিয়ে বর্তমানের তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুক্ত করে।
বর্তমানে এই ফরম্যাটটির বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের সাবেক সিইও মাইকেল ফোর্ডহ্যাম, যিনি এখন ‘টেস্ট টুয়েন্টি’র চিফ অপারেটিং অফিসার। এই নতুন ফরম্যাট শুধু খেলায় নয়, বরং তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করবে। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ক্রিকেটারদের জন্য একটি জোনিয়র টেস্ট টুয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করা হবে, যা মোট ৫০টিরও বেশি দেশে অনুষ্ঠিত হবে। এই মাধ্যমে উঠে আসবে আগামী দিনের পেশাদার ক্রিকেটাররা।
বাহিরওয়ানির লক্ষ্য, যোগ্যতা ও প্রতিভার ভিত্তিতে একটি সিস্টেম গড়ে তোলা, যেখানে লিঙ্গ বা অঞ্চল বিবেচনা না করে প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা সুযোগ পাবেন। তথ্য বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে উপযুক্ত খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করা হবে।
‘টেস্ট টুয়েন্টি’র প্রথম মৌসুম শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে়, যেখানে অংশ নেবে ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি—তিনটি ভারতীয় ও তিনটি আন্তর্জাতিক দল। দলগুলো হবে দুবাই, লন্ডন ও অজানা একটি শহরে (ঠিক কোথা হতে পারে তা এখনও ঘোষণা হয়নি)। প্রতিটি দলে থাকবেন ১৬ জন ক্রিকেটার—৮ জন ভারতীয় ও ৮ জন আন্তর্জাতিক। এই মৌসুমে মোট ৯৬ জন ক্রিকেটার নিলামের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে, পাশাপাশি রয়েছে ২০৪ জন ‘ওয়াইল্ডকার্ড’ প্লেয়ার, যাদের দলে নেওয়া সম্ভব হবে মৌসুমের মধ্যভাগে।
সর্বশেষ বলা যায়, লাল বলের ঐশ্বর্য ও ছোট ফরম্যাটের রোমাঞ্চকর পরিবেশ একত্রিত করে ‘টেস্ট টুয়েন্টি’ ক্রিকেটের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এটি শুধুই একটি নতুন ফরম্যাট নয়, বরং ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন যা পুরনো সম্মান রক্ষার পাশাপাশি ভবিষ্যতের পথ প্রস্তুত করছে।