বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত ও সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল (২০ অক্টোবর, সোমবার), রাজধানীতে, ২৫ অক্টোবর (শনিবার) সব বিভাগীয় শহরে এবং ২৭ অক্টোবর (সোমবার) সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হবে। আজ (১৯ অক্টোবর, রোববার) জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ৮টি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত ও অন্যান্য সমমনা দলের নেতারা দ্রুতই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনের দাবি জানান। লিখিত বক্তব্যে তারা উল্লেখ করেন, দেশের জনগণের দাবি কার্যকর করতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হতাশা ও ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। তাঁদের মতে, এই পরিস্থিতিতে জনগণের দাবির বাস্তবায়নের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দ্রুতই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির পাশাপাশি নভেম্বরের মধ্যে গণভোট অনুষ্ঠিত করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে। এই গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচনে একদম সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি ন্যায্য ও জবাবদিহিতামূলক ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্য রয়েছে।
আন্দোলনের পেছনে ঐতিহাসিক পটভূমির ব্যাখ্যায় বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সফল গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচারী সরকার পতনের মাধ্যমে দেশ শান্তিপূর্ণ পথে ফিরে আসে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার বিনাশের পরে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং সংবিধানের কিছু বিধান অকার্যকর হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে জনগণের ঐকমত্যে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, যার স্বচ্ছ ও বৈধতার উৎস সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৭ এ নিহিত। সেই সঙ্গেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ দেওয়া জরুরি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বর্তমান সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করেছে, তবে তার সফলতা নিশ্চিত করতে হয় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। অতীতে দেখা গেছে ভোটে কারচুপি, কালো টাকা, ভোট কেন্দ্র দখল ও পেশিশক্তি প্রয়োগের কারণে ভোটপ্রক্রিয়া অপ্রতুল ও অবিচারপূর্ণ হয়ে দাড়ায়। তাই, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য ইচ্ছুক সব রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনরা একমত পোষণ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোট পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়ঃ
1) জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের আয়োজন।
2) ভবিষ্যত নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু।
3) সকলের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একসঙ্গর্ষ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন।
4) ফ্যাসিস্ট সরকার বা তার দোসরদের দমন-নিপীড়ন-জুলুম ও দুর্নীতির বিচার দ্রুত সম্পন্ন।
5) স্বৈরাচারীদের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি ২৭ অক্টোবরের মধ্যে দাবিগুলো মানা না হয়, তবে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তারা সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডক্টর আমহদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, নেজামের ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জাগপা’র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব নিজামুল হক নাইমসহ আরও অনেকে।