হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে গত শনিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের سبب ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামাল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় দেশের ঔষধ শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির নেতারা। সংগঠনের মতে, আনুমানিক ৪৫টি শীর্ষ কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে।
বুধবার (২১ অক্টোবর) বেলার সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁওয়ে সমিতির কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানা যায়। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম মোসাদ্দেক হোসেন এবং মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন বিশদে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পরে তারা দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করেন এবং প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন যে, সর্বনিম্ন ৪৫টি বৃহৎ কোম্পানির মূল্যবান কাঁচামালের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
ডা. জাকির হোসেন জানান, অগ্নিকাণ্ডে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিক ও ক্যানসার ওষুধের কাঁচামালসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ওষুধ উৎপাদন কারখানাগুলোর জন্য বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে এসেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই আনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি শিল্প খাতে নানা ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
এ দিকে, সমিতির মতে, দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ১০০ শতাংশ ওষুধই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে, এবং এই খেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের সুনাম উচ্চতর হয়েছে। বর্তমানে, বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়ে চলেছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া।
সংগঠনটি জানায়, দেশের ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয় চীন, ভারত ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। এ ছাড়াও প্যাকেজিং উপকরণ, যন্ত্রপাতি ও স্পেয়ার পার্টসও সরবরাহ করা হয় আন্তর্জাতিক সূত্র থেকে। এসব কাঁচামালের বড় অংশ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সদস্যরা বলেন, কিছু স্পেয়ার পার্টস ও যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা আবার আমদানির জন্য অপেক্ষমান। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এখনো সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে ক্ষতি সীমিত করতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তারা আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
তাদের আরো সতর্ক করে বলেন, যেসব পণ্য অন্য বিমানবন্দরে আনা হয়েছে, সেগুলোর নির্দিষ্ট তাপমাত্রা রক্ষা জরুরি, এবং এগুলোর ক্ষতি হয়ে গেলে সরবরাহ বন্ধসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এই অগ্নিকাণ্ডে বেশ কিছু নারকোটিকস বিভাগ থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত পণ্য পুড়ে গেছে, যা পুনরায় আমদানি করতে জটিলতা তৈরি হবে।
সমিতির ধারণা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে, কারণ কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদনও অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক Estimate অনুসারে, এই ঘটনায় দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, ফার্মা শিল্পের ঝুঁকি ও সংকট এড়াতে নানা প্রস্তাবনা তুলে ধরে সমিতি। এর মধ্যে রয়েছে— ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যগুলোর উপর শুল্ক, ডিউটি, ট্যাক্স ও ভ্যাট দ্রুত ফেরত দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যসমূহের এলসির ব্যাংক চার্জ ও সুদ মওকুফ, পুনরায় আমদানির জন্য সহজ শর্তে এলসি খোলা, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের জন্য প্রয়োজনীয় চার্জ বা জরিমানা মওকুফ ও অনুমোদিত নারকোটিকস পণ্য দ্রুত আমদানি, অফিসের ছুটির দিনেও কাস্টমস কার্যক্রম চালু রাখা, কোল্ড চেইন পণ্য দ্রুত মুক্তি দেওয়া, অক্ষত চুরানির দ্রুত মূল্যায়ন ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে অবহিত করা এবং জাতীয় পর্যায়ে সরকারি সংস্থাগুলোর জরুরি বৈঠক ডেকে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।