দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে দেশের রপ্তানিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এই ঘটনায় আনুমানিক ১২ হাজার কোটি টাকা বা এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) দেশের রপ্তানি ও শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইএবি’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে শুধু ব্যবসায়ীরা না, পুরো অর্থনীতি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা কমে গেছে, ফলে ভবিষ্যতে বাজার হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পুরোপুরি তদন্ত প্রয়োজন, যাতে ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করে দ্রুত পুনর্গঠনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। শাহজালাল বিমানবন্দর দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এক মূল কেন্দ্র—এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের আর দেখতে চান না।
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি নেতারা বলেন, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এই কার্গো হ্যান্ডলিং জোনে প্রতিদিন কোটি কোটি ডলারের পণ্য আদানপ্রদান হয়। এই সংবেদনশীল স্থানে আগুনের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার গভীর দুর্বলতা মাথা তুলে ধরছে। তারা প্রশ্ন তুলেন—অটোমেটিক ফায়ার ডিটেকশন ও প্রোটেকশন সিস্টেম কি ছিল? আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং টিম কোথায় ছিল? বাইরে থেকে ফায়ার সার্ভিস দেরিতে আসার কারণ কি?
নেতারা অভিযোগ করেন, সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমস হাউস এবং বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এই তিন পক্ষই বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারে নি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আগুনে তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্য, ফলমূল ও ফার্মাসিউটিক্যাল কাঁচামালসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য পুড়ে গেছে। এতে অনেক ক্রেতা তাদের অর্ডার বাতিল করেছেন এবং বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে— ক্ষতিগ্রস্তদের বিমা দাবির দ্রুত নিষ্পত্তি, বিমা কাভার না থাকা পণ্যসমূহের জন্য বিশেষ সরকারি তহবিলের ব্যবস্থা, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা জোরদার, রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়ন, আধুনিক স্ক্যানার ও মনিটরিং প্রযুক্তির স্থাপন, কার্গো ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন এবং ফায়ার প্রোটেকশন ব্যবস্থার উন্নয়ন।
রপ্তানিকারক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সরকারের কাছে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি স্বরাষ্ট্র তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।