জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, জনগণের চাপের মুখে বিএনপি গণভোটে রাজি হলেও তারা নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, গণভোটের বিষয়টি সহজভাবে নিতে হবে, সেটি হলো—জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে অবশ্যই গণভোট সম্পন্ন করতে হবে।
তাহের বলেন, আমরা চাই এই গণভোটের জন্য একটি আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। তবে এই সিদ্ধান্তের কাঠামো কি হবে, কি কি আইনি সংস্কার দরকার এবং কে সেটি ঘোষণা করবে, এ সব প্রশ্ন উঠেছে। তিনি আরও জানান, যদি আইনগতভাবে সব কিছু চাপা পড়ে এবং ব্যত্যয় না হয়, তাহলে এই ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে দেওয়া উচিত। প্রেসিডেন্টের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ প্রেসিডেন্ট কারা তার পরিচয় সবাই জানে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় সেন্টার ফর পাবলিক পার্টিসিপেশন থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি, সাক্ষাৎ শেষে।
তাহের আরও বলেন, তিনি এবং জামায়াতের অন্য নেতারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই সাক্ষাৎ করেছেন। সংলাপে একসাথে দীর্ঘ আলোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে তারা একটি সনদ স্বাক্ষর করেছে। তিনি জানান, মোট ৮০টির বেশি বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে, এবং সেগুলোর দ্রুত আইনি পরিমার্জন ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। বিশেষত, próximas জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে তিনি অনুরোধ জানান।
তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, এসব সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে এগুলোর কোনো অর্থ হয় না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়ে একটি আদেশের মাধ্যমে এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের বাইরে নয়, কারণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সরকার প্রধানের এতোটাই ক্ষমতা আছে। তিনি উল্লেখ করেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন আলাদা-আলাদা বিষয়, এবং গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনের পরিসরে বড় পরিবর্তন আসবে। এজন্য, আগে গণভোট সম্পন্ন করতে হবে।
তাহের যুক্তি দেন, ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ বা অসহমত প্রকাশের কোনও বিষয়ে আলোচনা হবে না। এরপর তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা চলাকালে দেখা গেছে, তারা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে, কিন্তু তারা ‘প্যাঁচ’ লেগিয়েছে—গণভোট ও নির্বাচনের তারিখ একসঙ্গে হতে পারে বলে ঢকঢাক দেয়া। তিনি স্পষ্ট করেন, এই দুই বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। নির্বাচন হলো নির্ধারিত দিনে জনপ্রতিনিধিদের ভোটে সরকার কেমন হবে তা ঠিক করে, আর গণভোট হচ্ছে সংস্কার বা রূপান্তর সংক্রান্ত। এই সংস্কারগুলো সম্পন্ন না হলে, তা কার্যকর হবে না।
তাহের বলেন, গণভোটের জন্য ভিত্তি হবে জনগণের স্বার্থবেদনা ও দাবির ওপর; যদি জনগণ হাঁ বলে তাহলে পাস হবে। যদি না বলে, তা পাস হবে না। কারণ, এটি জনগণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা নয়, তবে সবচেয়ে শক্তিশালী রিফারেনস। তিনি আরও বলেন, আপার হাউস বা উচ্চতর সংসদ নির্বাচন হচ্ছে আলাদাভাবে। যদি এই নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট একত্রে হয়, তাহলে আপার হাউসের ইলেকশন পাবে না। এতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, কেউ চ্যালেঞ্জ করলে বাতিলও হতে পারে। তাই, ভোটের আগে আপার হাউসের নির্বাচন বা সেই প্রক্রিয়া ঠিক থাকবে বলে তিনি জানান।
তাহের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অপরিহার্য। এর জন্য নভেম্বরের آخرের দিকে এই গণভোটের আয়োজন করার প্রস্তাব দেন। অনেক সময়ও হাতে রয়েছে—এক মাসের বেশি। এরপর দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, খরচের কথা ভেবে চিন্তা না করে, আমরা যেসব সরঞ্জাম ও মেশিন কিনেছি, সেগুলো দুই নির্বাচনের জন্যই ব্যবহার হবে। তিনিও মন্তব্য করেন, দেশকে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে হলে এই খরচ মোটেও বেশি নয়।
তাহের অভিযোগ করেন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগই একটি দলের পক্ষ থেকে আসছে। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখกลางে পড়ে। তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকার থাকলেও, একটি সমান ও ন্যায্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের আগে যেখানে যেখানে বদল আনতে হবে, সেখানে বদল আনতে হবে। তিনি বলেন, যদি দরকার হয়, নিজে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মত দায়িত্ব পালন করবেন এবং কর্মকর্তাদের পোস্টিং লটারির মাধ্যমে ঠিক করবেন, কোনো সমস্যা নয়। তবে এই লটারির পেছনে যেন কোনও দুর্বৃত্তের ছাপ না থাকে।
তাহের বলেন, রিফর্মসের ঘোষণা বা আদেশ কে দেবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি আইনে এই বিষয়টি কাভার করে এবং কোনো ব্যত্যয় না হয়, তাহলে এই আদেশ চিফ অ্যাডভাইজার বা প্রধান উপদেষ্টা দেবেন। প্রেসিডেন্টের নামে যেন এই ঘোষণা না হয়, কারণ সবাই জানেন তার সঙ্গী বা သူের পক্ষে কে।
বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য নেতারা বলেন, আইনগত দিকগুলো পর্যালোচনা করে কোনো সমস্যা থাকলে, তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে এই ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টাই দেবেন।
অহংকারে, নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের কুরআন প্রশিক্ষণ প্রবৃত্তি ও বিএনপির হামলার বিষয়েও তারা আলোচনা করেন। তাঁরা সতর্ক করে দেন, নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি যদি এভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে ভোটের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।
সর্বশেষে, বুধবার বিকেলে ডা. তাহের নেতৃত্বাধীন জামায়াতের প্রতিনিধি দল যমুনা ভবনে প্রবেশ করে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই দলের মধ্যে ছিলেন—সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ।