একটি রাজনৈতিক দল সম্প্রতি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ বক্তব্য দেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) উদ্যোগে ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
জনন্য, এই অনুষ্ঠানে ইউট্যাবের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অংশ নেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য ও প্রত্যাশা কী হবে? আমাদের নতুন প্রজন্মের ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন সভা ও সেমিনার আয়োজন করেছেন তরুণদের ভাবনা জানার জন্য। তিনি জানান, চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিবর্তন, বিশেষ করে শিক্ষা, মানসিকতা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়ন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এক্ষেত্রে মেধা, জ্ঞান এবং প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে হবে। সমাজের সব পর্যায়ে, যেখানে আমরা কাজ করি না কেন, সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। শিক্ষকরা তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের গবেষণা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা বাড়াতে হবে। খাতভিত্তিক গবেষণামূলক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে আরও গবেষণা והשכלה চালু করতে হবে যাতে বিশ্বমানের দিক থেকে এগিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি কর্মমুখী, সময়োপযোগী কারিকুলাম কার্যকর করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিক্ষাব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহার পরিবর্তনও নজর দেওয়া দরকার।
সালাহউদ্দিন আহমদ বললেন, জনসংখ্যার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এই জন্য কেবল সরকারের উপরে নির্ভরশীল থাকা উচিত নয়; বরং সবখানে স্বনির্ভর হয়ে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছি, তা সর্বত্র অনুভব করতে হবে। পরিবর্তন শুধু চাকরি বা কর্মসংস্থান নয়, বরং এই আন্দোলন ছিল দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে চলা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের বৃহৎ প্রতিরোধ। এর মাধ্যমে দ্রুতগামী আন্দোলন ও গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল, যা রক্ত ও সংগ্রামের মাধ্যমে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছিল।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সকল সংস্কারই আগে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। না হলে আইন, সংবিধান বা অন্য কোনো রূপান্তর সাধারণ মানুষ দ্বারা কার্যকর হতে পারে না। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হলে আইনি কাঠামো উন্নত করতে হবে, ফলে জাতির মুক্তি সম্ভব হবে। সবাই মিলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দল বলেছে- তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে চাপে রয়েছে। তারা বলছে, জাতীয় নির্বাচনের দিনে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট হতে পারে। তবে বর্তমানে একটি দল সুযোগ খুঁজছে এই সনদে স্বাক্ষর করার। তবে তাদের কিছু দাবি-দাওয়া রয়েছে। তিনি আশাবাদী, এই পরিস্থিতির মধ্যে সমাধান আসবে সুন্দরভাবে। অন্তর্বর্তী সরকার আধিকারিক ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তিতে সম্পন্ন করা সম্ভব বলে তিনি তুলে ধরেন। সব সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাস্তবতা ও আইনের আওতায় নেওয়া উচিত।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইউট্যাব প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন এবং জাতিসংঘের সাবেক চিফ অব স্টাফ রেহান এ আসাদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মো. শামীমসহ আরো কয়েকজন।
উপস্থাপনা ও স্বাগত বক্তব্যে ড. মোর্শেদ হাসান খান উল্লেখ করেন, আমাদের মত মতাদর্শের দল বিএনপি মনে করে, দেশের যেকোনো উন্নয়নের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। তবে শিক্ষাকে অবশ্যই কাজে লাগানো ও যুগোপযোগী করতে হবে। গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, পরীক্ষার ভিত্তির উপর নির্ভর করে বহুলাংশে শিক্ষাব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে উঠেছে, যা বেকারত্বের সংখ্যা বাড়িয়েছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে জ্ঞানভিত্তিক ও চাহিদা ভিত্তিক করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা যেখানে কারিগরি, ভোকেশনাল ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের উদাসীনতার কারণে দেশের শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। তাই দ্রুত ও মূলধারার পরিবর্তন অতি জরুরি। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চলা জঞ্জাল আর সমস্যা উচ্ছেদ করে আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।






















