আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের দিকে যাওয়া নদীতে বাঁধ নির্মাণ এবং পানির প্রবাহ সীমিত করার পরিকল্পনা করছে তালেবান সরকার। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা সম্প্রতি কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, কুনার নদীর ওপরে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ বাঁধ নির্মাণের। এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি এখন আলোচনা সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে কিছু সময় আগে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও এখন এই বাঁধ নির্মাণ বিষয়টি সম্পর্কের ভেতর নতুন করে উত্তেজনা জোগাবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আফগানিস্তানের পানি ও জ্বালানি মন্ত্রী মোল্লা আব্দুল লতিফ মনসুর বলেন, ‘সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, কুনার নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করতে। পাশাপাশি, দেশীয় কোম্পানিগুলোর দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আফগানের নিজস্ব পানি ব্যবস্থাপনার অধিকার আছে। এই প্রকল্পটি বিদেশি না, বরং দেশের স্থানীয় সংস্থা গুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।’
কুনার নদী, যা ৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ, আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে নাঙ্গারহার প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর এটি পাকিস্তানে প্রবেশ করে খাইবার পাখতুনখোয়ায়, যেখানে এটি জালালাবাদের কাছে কাবুল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। পাকিস্তানে এই নদীকে চিত্রাল নদী বলা হয়। এই নদীটি উপত্যকা ও পানি সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষ করে সিন্ধু নদে রয়েছে এর সংযোগ, যা পাকিস্তানের পানির বড় উৎস।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি কুনার নদীর পানি প্রবাহ কমে যায়, তবে এটি সিন্ধু নদীর ওপর তীব্র প্রভাব ফেলবে, যা পাকিস্তানের কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জীবনধারায় গুরুতর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সম্প্রতি, চলতি বছর এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারতের দাবি, এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তান দায়ী। এর موجে, পাকিস্তান সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর, মে মাসে দুই দেশ তীব্র সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
১৯৬০ সালে, বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায়, ভারত ও পাকিস্তান সই করে ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’। এই চুক্তির আওতায়, ভারত নেভদীর স্রমধন যেমন সতলজ, বিয়াস ও রাভি নদীর পূর্ণ অধিকার পায়। অন্যদিকে, পাকিস্তান পান করতে পায় ইন্দুস, ঝিলম ও চেনাব নদীর জল। এই চুক্তি দুই দেশের পানির ব্যবহারে সুষ্পষ্ট বিতরণ নীতির সূচনা করে, যা এখনো বহাল রয়েছে।






















