রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করে দিল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় তারা। শীর্ষ দুই রুশ তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকওয়েল, যারা রাশিয়ার সমুদ্রপথের তেল বিক্রির জন্য প্রধানভাবে দায়ী, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। এর ফলে চীনের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এখন থেকে রুশ তেল আমদানির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে চাইছে, কারণ তারা অনিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করছেন। বৃহস্পতিবার, একাধিক বাণিজ্যিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইউক্রেনের শান্তি চুক্তির চাপ বাড়ার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়ার তেল বিক্রির ওপর ঝুঁকি কমাতে চাইছিল। এর আগেও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মেনে রুশ তেল আমদানি কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল। এর ফলে, এখন চীন ও ভারতের মতো বড় ক্রেতারা রাশিয়ার তেল থেকে সরে আসার পথে। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে রাশিয়ার রাজস্বের ওপর বড় ধাক্কা লাগতে পারে এবং বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যে কারণে তেলের দাম আবারও বাড়তে পারে।
সূত্রগুলো জানিয়েছেন, চীনা জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রোচায়না, সিনোপেক, সিএনওওসি ও ঝেনহুয়া অয়েল আপাতত সমুদ্রপথে রুশ তেল কেনাবেচা বন্ধ রেখেছে। তারা আশঙ্কা করছে, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি তারা। চীনা সংস্থাগুলো দৈনিক প্রায় ১৪ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করলেও, বেশিরভাগ কাজ করে বেসরকারি ক্ষুদ্র রিফাইনারি বা ‘টিপট’ কোম্পানিগুলো। বিশ্লেষকেরা জানাচ্ছেন, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর রুশ তেল কেনা দৈনিক ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল ছিল, যা আগের তুলনায় কম।
সিনোপেকের বাণিজ্যিক শাখা ইউনিপেক, গত সপ্তাহে রুশ তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, কারণ যুক্তরাজ্য রসনেফট, লুকওয়েলসহ রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিট’ জাহাজ ও কিছু চীনা প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এছাড়া, রসনেফট ও লুকওয়েল সরাসরি নয়, মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে তেল বিক্রি করে থাকে। অন্যদিকে, কিছু স্বাধীন রিফাইনারি পূর্বাভাস অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছে, তবে তারা রুশ তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
চীন আরও প্রায় ৯ লাখ ব্যারেল রুশ তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করে, যা সবটাই পেট্রোচায়নার কাছে যায়। এই সরবরাহে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও চীন অন্য উৎস থেকে তেল কিনতে উৎসাহী হবে। এর ফলে, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার নিষেধাজ্ঞামুক্ত তেলের দাম আরও বাড়তে পারে।






















