প্রথম দুটি ম্যাচ হেরে দেশের জন্য সিরিজটি অনেকটাই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল ভারত। শেষ ম্যাচটি ছিল তাদের জন্য মান-সন্মান ফিরিয়ে আনা এবং সিরিজের মোড় ঘুরিয়ে দেবার একটি সুযোগ। সিডনিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওয়ানডেতে কিংবদন্তি ব্যাটার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি আবারও নিজেদের অতীতের স্বর্গীয় ধারায় ফিরে আসেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই ম্যাচে তাঁদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে ভারতের জয় হয় ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে, যা ছিল তাদের জন্য অনেকটাই স্বস্তির ও উল্লাসের মুহূर्तन।
অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৬.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২৩৬ রান। ভারতের জবাব দিতে নেমে ২৩৭ রানের লক্ষ্যে তারা মাত্র ৩৮ ওভারে পৌঁছে যায়, হাতে তখনও ৯ উইকেট বাকি থাকতেই। ম্যাচের মূল নায়ক হিসেবে খেলেছেন রোহিত ও কোহলি—উভয়ই অপরাজিত থেকে গেছেন। রোহিত খেলেছেন অনবদ্য ১২১ রান (১২৫ বল) যা তার ৩৩তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, আর কোহলি অপরাজিত থাকেন ৭৪ রান (৮১ বল) দিয়ে। এই জুটি ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৪৮৩ রানের সমন্বিত স্কোর নিয়ে এসেছে, পাশাপাশি তারা এখন তৃতীয় স্থানে থাকেন বৃহৎ ওপেনিং পার্টনারশিপের তালিকায়।
ম্যাচ শেষে রোহিত ও কোহলি দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, এবং ইঙ্গিত দেন এটি হতে পারে তাদের অস্ট্রেলিয়ায় শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। রোহিত বলেন, “এখানে এসে খেলাটা সবসময়ই দারুণ লাগে। ২০০৮ সালের স্মৃতি সংরক্ষিত এই দেশের সাথে। জানি না আবার কখনও এই মাঠে ফেরার সুযোগ হবে কি না। তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো ক্রিকেট উপভোগ করা, সেটা যত বড় বা কঠিনই হোক না কেন। পার্থে নতুন করে শুরু করেছিলাম, বর্তমানে সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করছি।”
অন্যদিকে, কোহলি বললেন, “রোহিতের সঙ্গে ব্যাটিং সবসময়ই সহজ ও উপভোগ্য। মাঝ মাঠে যে বোঝাপড়া, তা আমাদের সামর্থ্যের বড় শক্তি। যত কঠিনই হোক পরিস্থিতি, আমরা তা সামলে নিতে পারি। আজকের ইনিংসটা শেষ পর্যন্ত রাখতে পেরেই আমি আনন্দিত।” তিনি আরো যোগ করেন, “আমাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে শুরু হয়েছিল এই জুটি। জানতাম, ২০ ওভার একসঙ্গে খেললে ম্যাচ আমাদের পক্ষেই যাবে। অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর থেকে আমরা সব সময় ভাল খেলেছি, এখানকার দর্শকরা আমাদের খুব পছন্দ করে।”
তাদের এ পারফরম্যান্স, যদিও সিরিজের ফলাফল অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে গিয়ে থাকলেও, এটি প্রমাণ করে দেয় যে এখনও তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার। সিডনিতে শনিবারের ম্যাচে রোহিত–কোহলি জুটি গড়েছে ১৯তম ওয়ানডে শতকের পার্টনারশিপ। এই তালিকায় তারা এখন তৃতীয় স্থানে অবস্থান করে আছেন। এই জুটিতে সাধারণত চার হাজার পাঁচ শ’ রান পার করেছেন তারা, যা এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই তালিকায় শচীন টেন্ডুলকার ও সৌরভ গাঙ্গুলির জুটি রয়েছে ১৭৬ ইনিংসে ৮২২৭ রানের ইতিহাস।
রোহিত–কোহলির ১৬৮ রানের অপরাজিত জুটি নিশ্চিত করেছে ভারতের সহজ জয়, আর দর্শকদের মনে ফিরিয়ে এনেছে সেই পুরোনো আধুনিক ব্যাটিং লুক। তবে সিরিজ ফলাফল অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দাঁড়ালেও, টি দল নিজেদের পারফরম্যান্সে গর্বিত। এর আগে, ভারতের তরুণ পেসার হর্ষিত রানা দুর্দান্ত বোলিং করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ৩৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনি বোল্ড করেছেন অস্ট্রেলিয়াকে ২৩৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে অর্জন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।






















