বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে আবারো ঐকমত্যের অভাব দেখা দিলে পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হয়ে উঠবে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন শিল্পপতি ও সমাজসেবক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের মধ্যে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যদি জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিরোধ মেটানো যায় না, তাহলে নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হবে না এবং ড. ইউনূসের পদত্যাগের প্রয়োজন পড়তে পারে। এই পরিস্থিতি ভয়ানক বাজেভাবে জটিল আকার নিতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
মঞ্জু বলেন, গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। সেখানে আদেশ জারি করার পাশাপাশি নির্বাচনের আগের যে কোনো সময় গণভোটের প্রস্তাব রয়েছে। যদি সংবিধানের সংশোধন ৯ মাসের মধ্যে সম্পন্ন না হয়, তাহলে এই প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
সনদের আইনি ভিত্তিতে তিন ধাপে এই বাস্তবায়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথমে সংবিধান সংশোধনের জন্য আদেশ জারির মাধ্যমে শুরু হবে, এরপর গণভোটের ব্যবস্থা এবং শেষ পর্যায়ে সংসদে এই সংশোধনগুলো প্রণয়ন। এর বাইরে, সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং কিছু প্রস্তাব অফিস আদেশের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়িত হতে পারে।
মঞ্জু জানায়, সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয় নিয়ে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—একটি হলো, ২০২৫ সালে জাতীয় সনদের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করা। এই প্রক্রিয়ায় আদেশ দিয়ে নির্বাচনের জন্য গণভোটের মাধ্যমে এই সংশোধন কার্যকর হবে। অন্য প্রস্তাবে, সংবিধান সংশোধনের জন্য full বিল সংসদে পাস করে গণভোটে নেওয়া হবে, তবে টার্মিনেশনের মধ্যে এটি সম্পন্ন না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে সংযোজন হয়ে যাবে।
গণভোটের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের ওপরই থেকে যাবে বলে জানান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, যখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে তখন রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি সম্মতি যুগিয়ে মেনে নেবে।’ তারা এও জানান, নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তির ব্যাপারে মনে করেন, গণভোটে যোগ দেওয়ার জন্য সকলের উচিত একত্রিত হয়ে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা। যারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন, তারা চাইলে আগেভাগে সমঝোতা করে বিষয়গুলো সমাধান করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিলটি সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে—এটি একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলিল। ২৭০ দিনের মধ্যে এই সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন, কারণ দীর্ঘ আলোচনা শেষে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবগুলো খুব দ্রুতই বাস্তবায়িত হতে পারবে।
মঞ্জু সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন প্রধান কাজ হলো ইগো পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সনদ কার্যকর করতে সম্মত হওয়া। তা না হলে নির্বাচন আয়োজনের ওপর অনিশ্চয়তা জন্মাতে পারে, এবং ড. ইউনূসের পদত্যাগের প্রয়োজন পড়তে পারে, যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, আনোয়ার সাদাত টুটুল, ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, এবিএম খালিদ হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সেলিম খানসহ অন্যান্য নেতারা।
 
			 
		    





















