একটি মহল আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার লক্ষ্য নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই মহলটি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে অমান্য করে আসছে। বিএনপি এ দৃঢ়ভাবে বলছে, তারা সেই জনগণের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, যা দেশের মানুষ চায়।
বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছেন, দলটি সংস্কারের জন্য বৃষ্টি উপেক্ষা করে জুলাইয়ে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কমিশন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সংকটের মূল দায় বরং সরকারের উপর থাকছে। তাঁর এই বক্তব্য শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রকাশিত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা অবশ্যই নির্বাচন করব। বয়সী একজন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার সঙ্গে আমরা একমত, তাই আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে চাচ্ছি।’ তিনি অভিযোগ করেন, একদল কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের মূল সমস্যা সৃষ্টি করছে, যাতে জনগণ বিভ্রান্ত হয়। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য এখন আর সুযোগ নেই; প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচন হবে এবং তার সঙ্গে একটি গণভোটের কথাও উল্লেখ করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের দিন দুইটি ব্যালটে ভোট দেওয়া হবে—একটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য, অন্যটি গণভোটের জন্য। আমি মনে করি, এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত থাকা উচিত নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা বর্তমানে গোলমাল সৃষ্টি করছে, রাস্তায় নেমেছে, তাদের অনুরোধ করি, জনগণকে বিভ্রান্ত না করে আবেগে না গিয়ে নিজেদের দায়িত্ব নিন। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই দেশের মানুষ যাদের বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করে, তারা ক্ষমা পায় না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছে। যেখানে সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাক্ষর জমা দেওয়ার সময় বছরের শুরুতে বৃষ্টি হচ্ছিল, সেখানে তারা নানা বাহানায় সই করেছেন। তবে, তারপর দেখা গেল, ঐকমত্যের অনেক অংশ উপেক্ষা করা হয়েছে এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’ গুলোর কথাও উল্লেখ করা হয়নি। আমাদের মনে হয়েছে, এই আচরণ বিশ্বাসঘাতকতা।
তিনি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, তারা বিশ্বাস হারিয়েছেন। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের।’
তিনি বলছেন, বিএনপি মূলত সংস্কারকামী দল। এই দল প্রায় চার দশক ধরে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। তিনি বলেন, সে সময় সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল—তবে জিয়াউর রহমান সেটিকে খোলার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন।
ফখরুল বলেন, ‘শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের সূচনা হয়। পরে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্টশিপ থেকে পার্লামেন্টারী পদ্ধতিতে ফিরে আসেন। বিভিন্ন নির্বাচনেও এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে, যেখানে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় সংস্কারের জন্য কাজ করছি। ১০ দফা, ২৭ দফা, ৩১ দফা—সবই ছিল পরিবর্তনের চেষ্টার অংশ। আমরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছি এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সকল সম্মতিতে স্বাক্ষর করেছি। তবে বিভ্রান্তির জন্য দায়ী ঐকমত্য কমিশনের কিছু পক্ষ।’
ফখরুল পরিকল্পনা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে নিয়ে একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই। সকলের সহযোগিতা নিয়ে দেশের জন্য একটি কার্যকর, মসৃণ নির্বাচন এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব শেখাতে চাচ্ছি।’
এ ছাড়াও, তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য মূল দায়ী অন্তর্বর্তী সরকার ও তার নেতৃত্ব। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই এবং নির্বাচনের দিন দুটি ব্যালটে ভোটের হতে হবে—একটি রাজনৈতিক প্রার্থী নির্বাচনের জন্য এবং অন্যটি গণভোটের জন্য। বিএনপি বিশ্বাস করে, এই বিশ্বাসঘাতক আচরণ ও বিশ্বাসের সেতু ভেঙে দেওয়ার জন্য এই সরকার দায়ী।
সবশেষে, মির্জা ফখরুল সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দেশের চলমান অচলাবস্থা পুরোপুরি সরকারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, এই আলোচনা চলাকালীন তারা অনেক ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলেও, কিছু মতভেদের কারণে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন যা মূল আলোচনা থেকে বাদ যায়নি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা নতুন পরিবর্তন আনতে পারবো।





















