সৌদি আরব আসন্ন ২০৩৪ বিশ্বকাপের জন্য এক অভিনব ও ভাবনার বাইরে যেখানে আর কখনো দেখা যায়নি, এমন একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে। সামাজিক মাধ্যমে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই তা দ্রুত আলোচনা ও ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। সেটি হলো, আকাশে নির্মাণ হবে একটি ভাস্বর ফুটবল স্টেডিয়াম, যার নাম ‘নিওম স্টেডিয়াম’। এই স্টেডিয়াম বিশ্ব ফুটবল মহাধুমধাম ছাড়াবে বলে আশা করছে অনেকে।
প্রকল্প অনুযায়ী, এই স্টেডিয়ামটি ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপের আয়োজনের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হবে, যেখানে ২০টি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশাপাশি, আরও চারটি পুরোনো স্টেডিয়ামকে আধুনিক যৌগিক ও প্রযুক্তিগত মান উন্নত করার কাজ চলবে।
ফিফার বিডে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘নিওম স্টেডিয়াম’ হবে বিশ্বের অন্যতম অনন্য ও চোখে পড়ার মতো একটি স্টেডিয়াম। এর মাঠ থাকবে ৩৫০ মিটার উচ্চতায় মাটি থেকে ওপরের দিকে, যেখানে ভবনটি শহরের নিজস্ব কাঠামো দিয়ে নির্মিত হবে। এতে দর্শকরা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা পাবেন।
এই স্টেডিয়ামটি তৈরি হবে ‘দ্য লাইন’ নামে পরিচিত এক ভবিষ্যতনির্ভর স্মার্ট শহরের অংশ হিসেবে। ২০২১ সালে ঘোষণা করা এই প্রকল্পটি এক সরল রেখার মতো অবস্থিত, দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার, প্রস্থ ২০০ মিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫০০ মিটার। এই শহরে গাড়ি থাকবে না, রাস্তা বা কার্বন নিঃসরণ সম্ভব হবে না। প্রায় ৯০ লাখ মানুষের বসবাসের পরিকল্পনা রয়েছে এই ‘দ্য লাইন’ নগরীতে। প্রকল্পের মূল কাঠামো এখন নির্মাণধীন, এবং পুরোপুরি বাস্তবায়নে সম্ভবত পুরোপুরি শেষ হবে ২০৪৫ সালে, অর্থাৎ বিশ্বকাপের ১১ বছর পরে।
প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, ‘নিওম স্টেডিয়াম’ এ প্রত্যাশা করা হয়, দর্শকদের বসার জায়গা হবে ৪৬ হাজার। এই স্টেডিয়ামটি থাকবে ৩৫০ মিটার ওপরে, যা দর্শকদের এক অনন্য মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ দেবে। সৌদি আরবের অন্যান্য প্রস্তাবিত ভেন্যুগুলো হবে রিয়াদ, জেদ্দা, আল খোবার ও আভা শহরে, যেখানে প্রতিটি স্টেডিয়ামের নিজস্ব আলোকসজ্জা ও স্থাপত্যশৈলী থাকবে। কিছু স্টেডিয়ামে থাকবে রঙিন আলো, স্ফটিকের মতো নকশা বা স্থানীয় উপকরণ দিয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা।
ফিফা এবারের ২০৩৪ বিশ্বকাপের ঘোষণা ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি বিশেষ কংগ্রেসে ঘোষণা করে, যেখানে সৌদি আরবকে স্বাগতিক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ফিফার শর্ত অনুযায়ী, কমপক্ষে চারটি স্টেডিয়ামে ধারণক্ষমতা ৪০ হাজারের বেশি দর্শক হতে হবে। অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকে বিড না থাকায়, সৌদি আরব এককভাবে আয়োজক হওয়ার সুযোগ পায়।
ফিফা’র রোটেশন নীতি অনুসারে, এবার এই বিশ্বকাপ কেবল এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। স্বাগতিক নির্বাচনের জন্য মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়, যেখানে সৌদি আরবই একমাত্র আগ্রহ দেখায়। এই বিশ্বকাপ হবে ২১ শতকে এশিয়ায় তৃতীয় বড় আয়োজন হিসেবে, যেহেতু ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান এবং ২০২২ সালে কাতার স্বাগতিক ছিল।
২০২৬ সালে হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর যৌথ আয়োজনের বিশ্বকাপ। তার পরের বছর, ২০৩০ সালে, স্পেন, পর্তুগাল, মরক্কো এবং দক্ষিণ আমেরিকার উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে কিছু ম্যাচ আয়োজন করবে। এই ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নত্বের দীর্ঘ ও ঐতিহাসিক পথ চলা অব্যাহত থাকবে।
সৌদি আরবের জন্য এখনো মোট বা অনেক সময় রয়েছে ভেন্যু নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষ করার। তবে এরই মধ্যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, কারণ আগামী ২০২৬ সালের উত্তর আমেরিকা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে, যা শুরু হবে আগামী ১১ জুন। সেখানে হয়তো শেষবারের মতো দেখা যাবে ফুটবল মহাতারকাদের, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসিকেও।






















