বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে সমমনা আটটি রাজনৈতিক দল আবারও তাদের ৫ দফা দাবির বাস্তবায়নের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির প্রধান নেতা, আমির মাওলানা মামুনুল হক।
মাহমুলুল হক বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। যদিও নির্বাচন কৌশলগতভাবে ঘনিয়ে আসছে, তবে ৭ জুলাই তোরার জন্য প্রণীত সনদ, যার আইনি ভিত্তি প্রয়োজন, এখনও তুলে ধরা হয়নি। জনগণের স্বপ্ন ও রাজনৈতিক প্রত্যাশা পূরণে এই সনদ কার্যকর করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে, সমমনা আটটি দলের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবির আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, অন্যথায় কিছুই সম্ভব নয়।
তদন্তের পরেও, যথাসময়ে রাজনৈতিক নিশ্চয়তা এবং সকল প্রক্রিয়া পরিষ্কার না হলে, দেশের নির্বাচনী পরিবেশ অনিশ্চিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাই সনদের আইনি বৈধতা অর্জনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী গণভোটের আয়োজন করে জনগণের মতামত নিশ্চিত করতে হবে। নামমাত্র আইনী পরিবর্তন না করে, যদি আরপিও পূর্বের মতোই রাখা হয়, তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়া অস্থির হবে। তিনি আশাবাদী যে, রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছাবে, ও জোর দিয়েছেন যে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের জানান, অনেক সমমনা দল আগেই বিভিন্ন বৈঠকে একমত হয়েছিলেন, কিন্তু হঠাৎ এক দল তাদের ঐকমত্যে সরে আসায় কিছুটা টানাপোড়েন দেখা দেয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই পারস্পরিক বিরোধ দ্রুত সমাধান হবে। দাবী করেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া গণভোটের সময়সীমা শিথিল হবে না, কারণ জনগণের মধ্যে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ ছোট হয়ে যাবে। নির্বাচনের দিন শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আলোচনাই হবে, ফলে গণভোটের সময় আলাদা করে আয়োজন অপরিহার্য।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৬ নভেম্বর সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পাঠানোর জন্য একটি গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১১ নভেম্বর ঢাকায় একটি বৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। মামুনুল হক বিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, সরকার সাত দিন সময় দিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করে সমাধান করতে সক্ষম হবে। দেশের স্থিতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ।
এছাড়া, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ, যেমন: ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, নেজামে ইসলামের মুফতি হারুন ইজহারসহ এফএএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা।
এর আগে সকালে, এই আটটি দল একসঙ্গে বৈঠক করে তাদের মূল অবস্থান ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করে। এ বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), খেলাফত আন্দোলন ও ডেভেলপমেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা। এই সভার ফলস্বরূপ, জনগণের জন্য এক ছিল কর্মসূচি ও দাবি। তারা উল্লেখ করেন যে, JULY সনদের আইনি কাঠামো স্পষ্ট না হলে, জনগণ আস্থা হারাবে এবং জাতীয় নির্বাচনও অনির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে। তাই, এই দলগুলো মনে করে, সমঝোতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো দীর্ঘস্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা আশাবাদী যে, একত্রে আলোচনা করে দ্রুত অচিরেই এই সংকট সমাধান হবে।





















