বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ৭ নভেম্বর আমাদের জন্যে এবং গোটা জাতির জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক দিন। আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে যখন মানুষজন নানা অনিশ্চয়তা ও হতাশার মুখোমুখি, তখন আবারো দেশের শত্রুরা মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে— এই পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বরের ঐক্যের চেতনা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তিনি রোববার (২ নভেম্বর) নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নভেম্বর দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। ১৯৭৫ সালে এই দিনই সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা তার বিরুদ্ধে যুঝে, তাকে বন্দি করে রেখেছিল। এই অবস্থা থেকে দেশের প্রবল বিপ্লবী ও জনগণ তাকে মুক্ত করে আনে। এরপরই বাংলাদেশের নতুন সাফল্যের ধারাবাহিকতা শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আসেন এবং দ্রুতই দেশকে সেই অবস্থানে নিয়ে যান যেখানে আগে বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলা হতো। তিনি দেশকে সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে নিয়ে যান। তার আমলে বাংলাদেশ পুনর্জাগরণের পথে হাঁটে, একটি emerging tiger হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ক্ষণজন্মা নেতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে, ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একটি অবিচল ঘোষণায় ঘোষণা দেন—‘I hereby declare the independence of Bangladesh.’ এরপরের পাঁচ বছর ছিল দুঃশাসনের অভিশাপে আক্রান্ত। সেই সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি খুবই দুর্বল ছিল, শ্রমিক সংকট, দুর্নীতি ও অপশাসন প্রসারিত। ১৯৭৪ সালে দারুণ দুর্ভিক্ষের ঘটনা ঘটে, লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তখন স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে স্বর্ণমন্দিরে ওই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের অগ্নিপরীক্ষা নিশ্চিত হয়।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেন। তিনি প্রথমে রাজনৈতিক সংস্কার শুরু করেন এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে নিয়ে আসেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন, নিষিদ্ধ পত্রিকা আবার চালু করেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন। অর্থনীতিতে তিনি সূচনা করেন নতুন যুগের। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে গার্মেন্টস শিল্প, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা রেমিটেন্সের মূল উৎস। নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে তার যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল, কৃষিতে খাল খনন, উচ্চফলনশীল বীজ ও সার ব্যবস্থার সংস্কার, শিল্পে তিন শিফটে উৎপাদন—এসব উদ্যোগে দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
তবে দুঃখের বিষয়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে নির্মমভাবে হত্যা হন। তবে তার দর্শন ও আদর্শ আজও জীবিত। তার প্রদত্ত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভাবনা কখনো পরাজিত হয়নি। তাই বিএনপিও হার মানেনি, তারা বারবার ধ্বংসের আদলে শক্তি ফিরে পেয়েছে এবং তারেক রহমান প্রবাস থেকে আওয়াজ তুলে দেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই দিনটি আমাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই দিনটি স্মরণ করি, কারণ এখান থেকেই জেগে উঠে জাতির চেতনাবাহিনী। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দর্শনকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাব — গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে।





















