হাইকোর্ট সরকার ও বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে এবার শুধু সরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাই নয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনল বিচারকরা।
গত সোমবার (৩ নভেম্বর) এক রিটের শুনানির পর হাইকোর্ট এই রায় দেন। এই রিটটি দাখিল করেছিলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক, যারা দাবী করেন যে, কেবলমাত্র সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে, যা অবৈধ। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আজ (৪ নভেম্বর) এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তথ্য নিশ্চিত করেছেন রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনতাসির আহমেদ।
এর ফলে, ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার নীতিমালা অনুসারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এখন এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকছেন রেজিস্টার্ড, অস্থায়ী রেজিস্টার্ড ও প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও। বিচারপতিদের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা, যেখানে এই পরিবর্তনের সুবিধা পাবেন অনেকই।
প্রাথমিক আদালতের তথ্যমতে, গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর একটি স্মারক প্রকাশ করে জানায় যে, শুধু সরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জের এক ব্যক্তিসহ মোট ৪২ জন রিট করেন। হাইকোর্টে এই রিটের প্রাথমিক শুনানিতে আদালত এটিকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে, ২০০৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অতঃপর, এই রায়ের ফলে যেন এখন থেকে বেসরকারি শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, সে জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়কে আইনি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক সরকারিপ্রাথমিক শিক্ষার ইতিহাসে ১৯৮১ সালে প্রথম বৃত্তি পরীক্ষা চালু হয়। এরপর ২০০৫ সালে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু ছিল। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন নীতিমালায় পরীক্ষা নেওয়া হয়, যেখানে সফল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়। এরপর করোনার কারণে ২০২০-২০২১ সালে এই পরীক্ষা স্থগিত থাকলেও, ২০২২ সালে আবার শুরু হয়। এই সময়ের মধ্যে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এই পরীক্ষা বন্ধ ছিল। তবে, বর্তমান রায়ের মাধ্যমে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০২৫ সালে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য এখন থেকে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে, যা আগে ছিল না।
			
		    



















