বাংলাদেশ জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে তবে আঙুল বাঁকা করা হবে, তবে তাতেই ঘি লাগবেই। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, আমরা চালাকি বুঝি এবং এই চালাকির ভিত্তিতে দাবি আদায়ের পথ খুঁজে নিব। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক দৃষ্টিকে অব্যাহত রেখে আন্দোলনে আছি। যদি প্রথমে দাবি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আন্দোলনের পথে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবো, এবং ঘি অবশ্যই লাগবে। তাহের আরও জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের প্রয়োজন রয়েছে এবং এটা না হলে অচিরেই তা সম্পন্ন হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদার দলের নেতাদের উপস্থিতিতে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করে, জুলাইয়েসনদ বাস্তবায়ন, নভেম্বরে গণভোট ও অন্যান্য দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। দুপুরে মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে র্যালি নিয়ে পল্টন মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশে অংশ নেন নেতারা। সমাবেশ শেষে তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে রওনা হন।
সমাবেশে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম জুলাই মাসে যে রক্তপাত হয়েছিল সেটাই সবশেষ হবে। এই শাহাদাতের মাধ্যমে আন্দোলন শেষ হবে, আর রাজপথে আসতেই হবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও রাজপথে আসতে হলো। তাহের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানান, তাঁরা রাজপথে আছেন ও রক্ত দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে জীবন দিতেও সম্মত, তবে জুলাই বিপ্লবের হার মানবেন না। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিরোধ করতে হবে ও জুলাই সনদ বাংলার মাটিতে আইনি রূপ দেওয়ার দিকে এগোতে হবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সরকার চতুরতার মাধ্যমে নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই চালাকির কারণে সত্যিকার গণভোট সময়মতো আয়োজন করা সম্ভব হবে। সরকারের কাছে দাবি, নির্বাচনের পূর্বে গণভোট আয়োজনের জন্য তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিক। তিনি বলেন, একদিনে এত চাঁদাবাজি হয় যে, তাতে গণভোট আয়োজনের জন্য টাকা চলে আসবে। সরকার ও চাঁদাবাজদের প্রতি তিনি আহ্বান, এসব বন্ধ করুন, তাহলে অর্থের অভাবে গণভোট হতে কোনো বাধা থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, আমরা শান্তি চাই, সমাধান চাই, আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই। আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, সরকারও আলোচনা করতে ইচ্ছুক। জামায়াত ইতোমধ্যে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, আপনাদেরও কমিটি ঘোষণা করতে হবে। সময়ক্ষেপণ বাদ দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগে বাধা পাওয়ার কথা স্বীকার করে তাহের বলেন, আমি কয়েকবার ফোন করেছি, কিন্তু পাইনি। আমি আবারও চেষ্টা করব। তিনি নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেন, বিএনপিকে আলোচনায় আনতে। রাজনৈতিক কারসাজি ও বিদ্বেষ নয়, প্রকৃত সমঝোতার মাধ্যমে সব কালো পিছু সরে আসা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, শুধু জুলাই সনদ নয়, দেশের নির্বাচন কিভাবে হবে, তার সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু না হয়, তাহলে দেশ আবার অন্ধকারে চলে যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রশাসনকে সতর্ক করে তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হবে, অন্যথায় দেশকে আবার বিচ্ছিন্নতার পথে ঠেলে দেওয়া হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি দাবি মানা না হয় ও পরিস্থিতি উন্নতি না ঘটে, তাহলে আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকায় ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এই দিন মহানগরীতে জনতার রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও দাবি আদায়ের জন্য লড়াই চলবে। শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, লড়াই করতেই হবে, আর লড়াই না করলে ন্যায়সঙ্গত দাবির বিজয় পাওয়া যাবে না।
প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে নতুন নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবেনা। ৫৪ বছর ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন পায়নি দেশ, আর এই সংগঠনগুলো এখন আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন মানবে না। তিনি মনে করেন, অযোগ্য নির্বাচন হলে দেশ আবার অন্ধকারে চলে যাবে, শেখ হাসিনার শাসনাবস্থায় ফিরে যাবে।
শেষে, তিনি জানান, আগামী ১১ নভেম্বরের কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীকে জনতার শহরে পরিণত করতে আন্দোলন চলবে। যদি দাবিগুলোর দাবি মানা না হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন, লড়াই করে বেঁচে থাকাই আমাদের লক্ষ্য। এই আহ্বানে সকল শরিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


















