বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে চক্রান্ত চালাচ্ছে। এরা জনগণের অধিকার হরণ করে ক্ষমতা কুক্ষোতে রাখতে এবং নির্বাচনে বাঁধা সৃষ্টি করে আবারও দেশের অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাইছে। তিনি বলেন, দেশকে ফ্যাসিবাদী রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে, যা জাতি কখনো মেনে নেবে না।
বৃহস্পতিবার যশোরের টাউন হলে এক স্মরণসভার বক্তৃতায় তিনি এই কথা বলেন। এটি ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণে তরিকুল ইসলাম নামে একজন ত্যাগী ও সংগ্রামী নেতার সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের আয়োজন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দ্রুত নির্বাচনের জন্য সরকারকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে, অন্যথায় তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে। দেশের জনগণের প্রত্যাশা হচ্ছে, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়, তখনই দেশের উন্নয়ন হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে শুরু করে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিএনপি আজকের অবস্থানে এসেছে। জনগণের দলের জন্য দয়া করে দেশ অস্থিতিশীল করবেন না, রাজপথে নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নেবে।
সংস্কার কমিশনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ৮৩ কোটি টাকা খরচ করে কমিশনটি একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সব দলের মতামত নিয়ে এগোতে চাইলে কিছু বিষয় এখনো সমাধানবিহীন রয়ে গেছে, যার জন্য সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, কমিশনের এই অপ্রত্যাশিত ধীরগতি দেশের রাজনীতি আর পূর্ণাঙ্গ সমাধান থেকে দূরে রাখছে।
তিনি আরও বলেন, ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের দিনটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে দেশের স্বাধিকার রক্ষায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই ইতিহাসের মহান অর্জন স্মরণ করে তিনি ভবিষ্যতে সবার ঐক্যকে আরও জোরদার করার আহ্বান জানান।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকে, তার ফল নেতিবাচক হবে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশের গণতন্ত্র আবার দৃঢ় হয়েছে। সেই গণতন্ত্রের পত পত পত স্বরূপের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিশেষ করে জাতীয় ইতিহাসের এমন দিনগুলোর গুরুত্ব আমরা গভীরভাবে জানি। ফলে যেসব চক্রান্ত বা পরিকল্পনায় দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে, সেগুলো প্রতিহত করতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল আরও জানান, তরিকুল ইসলাম ছিলেন সার্বক্ষণিক সংগ্রামী ও আদর্শপরায়ণ নেতা। তিনি মা, পতিতা ও দেশের মুক্তির জন্য নিবেদিত ছিলেন। কখনো অন্যায়ের কাছে আপস করেননি। স্বাধীনতা ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের জন্য দীর্ঘ সময় সংগ্রাম করেছেন, তবে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধিকার দেখার সৌভাগ্য পাননি। আজকের প্রজন্মের জন্য তার মতো নেতাদের প্রয়োজন রয়েছে।
শেষে তিনি মরহুম তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং যশোর জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের প্রাথমিক প্রার্থীদের পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি ধানের শীষে ভোট প্রত্যাশা করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি সভাপতি এড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কৃষক দলের যুগ্ম-সম্পাদক টিএস আইয়ুব, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সহ প্রজামাণ্য পেশাজীবী ব্যক্তিরা।
উল্লেখ্য, এই স্মরণসভা ঐতিহাসিক জনসভায় রূপ নিয়েছে, যেখানে নেতৃবৃন্দ তরিকুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পাশাপাশি রাজনীতি ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন।





















