গত জুলাই মাসে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত৩০ ঘটনাটির পেছনে উভয় পক্ষই দায়ী বলে প্রকাশিত হয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদনে। এই তদন্তে দেখা গেছে, সংঘর্ষের জন্য উসকানি, গুজব, এবং দুই পক্ষের চরম অবস্থানের পাশাপাশি মাঠের পরিস্থিতির সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় না হওয়াও বড় কারণ ছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ব্যর্থতা এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতা না থাকাটাই এই সংঘাতের অবদান রেখেছে।
তদন্তকারী কমিটির একজন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী জানান, তাদের প্রতিবেদনে ৮ থেকে ১০টি সুপারিশ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য পাঁচটি মূল করণীয় তুলে ধরা হয়েছে। তবে, গুলির বিষয়টি এই কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে ছিল না বলে তিনি স্পষ্ট করেছেন।
১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে সংঘটিত এই সংঘর্ষে গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যুর পর, সরকার একটি বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। তদন্তের লক্ষ্য ছিল, ওই ঘটনার মূল কারণ, দায়ী ব্যক্তি ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ। তবে, এই রিপোর্ট সেপ্টেম্বরে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালেও এখনো জনসম্মুখে প্রকাশিতা হয়নি।
সংঘর্ষের প্রথম সূত্রপাতের বিষয়েও তদন্তে মূলত দেখা গেছে, এনসিপির রোজার সমাবেশের নাম পরিবর্তন করায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, যা উত্তেজনা বাড়ায়। পাশাপাশি, সমাবেশের আগের দিন ও তার সকালেই বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
আলোচনায় উঠে আসে, এনসিপির সমাবেশে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগানও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, অনেকের ধারণা হয়তো এই স্লোগান কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্ম দেয়। এরফলে, মিসকনসিভ করা বিষয়গুলো দিকে দিকে বিভ্রান্তি ও বেড়ে ওঠে, যার ফলশ্রুতিতে সহিংসতা রূপ নেয়।
প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জে উত্তেজনা আগে থেকেই ছিল, যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটছিল। মূলত, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলের সংযোগের অভাব এই সংঘাতের জন্য দায়ী।
তদন্তে জানা গেছে, মূল জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করা হয়। বেশিরভাগেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে এবং স্থানীয় লোকজনের নেতৃত্বে ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় এসব ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আরেকবার আক্রমণ চালানো হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে শীর্ষ নেতা-কর্মীদের সামরিক বাহিনীসহ নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনাগুলো প্রতিরোধে কয়েকটি সুপারিশ চালু করা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যক্রমের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে প্রশাসনের অনুমতি নেয়ার প্রক্রিয়া জোরদার করা। অপরাধমূলক উসকানি বা উসকানিমূলক ভাষা ও মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি, কর্মসূচি আয়োজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও সংগঠকদের মধ্যে ভালো সমন্বয়ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
এছাড়া, ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে দায়িত্বে অবহেলা না করে সেই জন্য পেশাদারিত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি, সহিংসতা প্রতিরোধে বডি ক্যামেরার ব্যবহার ও প্রমাণ সংগ্রহের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে, কারণ এই ক্ষতি একান্তই রাষ্ট্রের মানবিক দায়িত্বের অংশ।
গুলির তদন্তে দেখা গেছে, কার গুলিতে কি ধরনের অঘটন ঘটে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। মরদেহের পোস্টমর্টেমের রিপোর্টও একই রকম ভাষায় উল্লেখ করে, মৃত্যুর কারণ ছিল রক্তক্ষরণ ও শক। তবে, কার গুলিতে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেটি তদন্তের মধ্যে ছিল না। এই জন্য, विशेषज्ञদের মতামত নিচ্ছেন, যেন এ বিষয়ে আলাদা তদন্ত করা হয় এবং দায়ীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়।
সংক্ষেপে, এই অস্থিরতা ও সংঘাতের জন্য বেশ কিছু কারণ ও দোষী ব্যক্তির প্রাধান্য পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের উচিত হয়েছে, এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তদন্ত করে দুর্বলতা চিহ্নিত করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন ক্ষতের পুনরাবৃত্তি রোধ হয় এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসে।



















