বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে কারো নিজেদের দলীয় স্বার্থে কাজ করা নয়। তার মতে, দেশের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও জনগণের দাবি মেনে চলা সরকার প্রতিষ্ঠা। তিনি শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের আয়োজিত হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হলে পরাজিত, ভবিষ্যতে পলাতক ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোর পুনর্বাসনের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ‘গুপ্ত রাজনীতি’ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান, কারণ কৌশলে কিছু অপশক্তি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বিরোধীরা গোপন কৌশল অবলম্বন করতো নিজেদের রক্ষা করার জন্য। বর্তমানেও কিছু অপশক্তি একইভাবে গোপন কৌশল ব্যবহার করে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে কি না, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
তারেক রহমান মন্তব্য করেন, রাজপথে আন্দোলনের দায়িত্বশীল কর্মসূচি পালনকারীরা কখনও কখনও দেশের বহু মানুষের অধিকার ও সুযোগের ক্ষতি করতে পারে। তিনি পতিত ও পলাতক অপশক্তির পুনরায় মাথাচাড়া দিতে দেবেন না বলেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব অপশক্তির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য দরকার একটি ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য, যার মাধ্যমেই তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন। বিএনপি এই ঐক্য বজায় রাখতে সহযোগিতা ও সহমত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি সবসময়ই “শান্তিপ্রিয়, সহনশীল এবং গণমুখী” একটি দল। ভিন্ন মতকে গ্রহণ করে সমন্বয় করার সংস্কৃতি তার দলের মূল বৈশিষ্ট্য। তিনি আরও যোগ করেন, দেশের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য বিএনপির এই রাজনীতি অতি জরুরি।
আসন্ন নির্বাচনে জয় লাভ করলে বিএনপি সরকারের গঠন হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। এই সরকার গঠন হলে ৫০ লাখ পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ বিতরণ, তরুণদের জন্য নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার আলোচনা।
তারেক রহমান বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ভাষা শিক্ষা দিয়ে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা হবে যেন তারা বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও কাজের সুযোগ পায়।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর তিনি আলোকপাত করে বলেন, এই বৈচিত্র্যই আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি এবং এর মধ্যেই ঐক্য নিহিত। তিনি আরও যুক্ত করেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের কথা। একজন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকে নিজের অধিকার সমানভাবে পাবে, এই বার্তা তিনি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি হিন্দু মুসলিম সব সম্প্রদায়ের দাবিগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ সেনের সভাপতিত্বে ভাইরাসযুক্ত বিষয়গুলো আলোচনা হয়। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষ থেকে তার বক্তব্য তুলে ধরেন, যেখানে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান দাবিগুলো তুলে ধরেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আরও অনেক। সব মিলিয়ে এই সমাবেশ দেশের সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।



















