দক্ষিণাঞ্চলের মাটি, মানুষ ও জীবনের গল্প নিয়ে 만든 তরুণ নির্মাতা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দেলুপি’ এর প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নে। বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে এই সিনেমার প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয় একটি খোলা মাঠে, যা নাটকীয়ভাবে প্রথমবারের মত বড় পর্দায় দেখানো হয়।
বিশেষ এ অনুষ্ঠানে গ্রামীণ সৌন্দর্য্য এবং উৎসবের আমেজ ছিল যেনো এক অনন্য বলিষ্ঠতা। মাঠে বিশাল পর্দা বসানো হয়ে, পাশে সাজানো হয় আসনগুলো। আবহাওয়া সন্ধ্যার আগেই দর্শকদের ঢল নামাতে শুরু করে। নারী, পুরুষ, শিশুসহ শত শত মানুষ একসাথে জীবনের গল্পে স্পন্দিত এই সিনেমা উপভোগ করেন।
প্রিমিয়ার চলাকালে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পরিবেশনায় পরিবেশ মুখর হয়ে উঠে। লোকজ নাচ-গানের মাধ্যমে পুরো এলাকা এক উৎসবের আবহে পরিণত হয়। দর্শকদের মুখে ছিল আচ্ছন্নতা এবং গর্বের অনুভূতি। স্থানীয় ইউপি সদস্য বদিয়ার রহমান বলেন, নদী ভাঙনে আমরা অনেক কষ্ট সহ্য করি, এই সিনেমা ঠিক সেই কষ্টগুলো হুবহু ফুটিয়ে তুলেছে। মনে হলো, নিজের জীবনের গল্পই দেখতে পাচ্ছি। অন্য একজন দর্শক রেখা রানী দাস বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ, ভাষা, কষ্ট—সেগুলো যেন পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এই সিনেমা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
‘দেলুপি’ সিনেমায় স্থানীয় নদীভাঙন, রাজনীতি, প্রেম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জীবন সংগ্রামের গল্প ফুটে উঠেছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙার আতঙ্ক ও দারিদ্র্যকে অতিক্রম করে জীবনে টিকে থাকার অনুপ্রেরণা এই সিনেমার মূল বার্তা।
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা খুলনার বিভিন্ন ইউনিয়নের স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা অভিনয় করেছেন। তারা তাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন। অভিনেতা জাকির হোসেন বলেন, আমি নিজেও যাত্রাদলে কাজ করেছি। তাই এই চরিত্র আমার জীবনেরই একটি অংশ। অভিনয় করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, আমি যেন নিজের গল্পই বলছি। অন্য একজন অভিনেতা চিরনিজিত বিশ্বাস বলেন, এটা শুধু সিনেমা নয়, এটি আমাদের এলাকার মানুষের সংগ্রামের দলিল। দর্শকরা নিজেদের গল্প খুঁজে পাবেন এই সিনেমায়।
সিনেমার সংগীত পরিচালক তপেশ চক্রবর্তী বলেন, গানগুলোর মধ্যে গ্রামীণ পরিবেশ ও আবহ বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। সুর ও গল্প যেন পরিপূরক হয়।
পরিচালক মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম বলেন, ‘দেলুপি’ অঞ্চলের গল্প বলার জন্য তৈরি। আমি চাইছি দর্শকরা যেন প্রকৃতি ও মানুষের জীবনকথার কাছ থেকে আসল অনুভূতি পান। তিনি আরও বলেন, এই সিনেমা শুধু দক্ষিণের গল্প নয়, এটি বাংলাদেশের নদীমাতৃক জীবনের প্রতিচ্ছবি।
প্রিমিয়ার শেষে অতিথিদের করতালিতে উৎসবের আমেজ আরো জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এ ধরনের বড় সাংস্কৃতিক আয়োজন দেখার সুযোগ পেয়েই তাঁরা খুবই আনন্দিত।
সিনেমার আন্তর্জাতিক মুক্তি এবং এটির সাধারণ প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী ৭ নভেম্বর খুলনায়। এরপর ১৪ নভেম্বর থেকে এটি সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের জন্য প্রকাশিত হবে।

















