রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ এবং ঝটিকা মিছিলের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এ সব ঘটনার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনের নামে নাশকতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার আগেই এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর ফলে ঢাকাজুড়ে নানা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। গত চার দিনে ঢাকাসমলিত বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং ৫০টির বেশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অনেক স্থানেই সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরত অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের ঘটনা দেখা গেছে। অন্যদিকে, গত ১০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণগ্রেফতার চালিয়ে মোট ১৯৫জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই আটকদের মধ্যে বেশির ভাগই নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ ও ঝটিকা মিছিলের পরিকল্পনায় জড়িত বলে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে, ১১ ও ১২ নভেম্বরের অভিযানে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা অনিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রের অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করে বিভিন্ন স্থানে একত্রিত হয়ে নাশকতা কর্মকাণ্ড চালাতে চেয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে গজারিয়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, গাজীপুরসহ অন্যান্য এলাকা। এর মধ্যে অনেকজনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের পদে থাকেন। ডিবির ধারণা, এসব কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনমনে ভয়াবন্ত আতঙ্ক সৃষ্টি করা। ১৩ নভেম্বরের দিন ঢাকায় নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যাতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তবে, এই অস্থিরতা উর্ধ্বমুখী থাকায় রাজনীতি ও সাধারণ জীবনপ্রবাহে প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি যানবাহনে আগুন লাগানো এবং অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আশুলিয়া, গাজীপুর, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় এ ঘটনা বেশিরভাগই ঘটে। বুধবার ভোরে আশুলিয়ায় আলীফ পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়, যা সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। একই দিন গাজীপুরের বাসন ও কাশিমপুর থানার বাসগুলোতে আগুন ধরানো হয়। মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আলম এশিয়া পরিবহনের বাসে আগুন দিয়ে একজন হেলপার মারা যান। এর আগে, সোমবার বাড্ডা ও নতুনবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা জুড়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকালে আরো চারটি স্থানে এই ধরনের ঘটনা দেখা গেছে। এর সাথে সাথে ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে দুটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ এবং শাহবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর, ফার্মগেট ও মালিবাগের মতো এলাকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৫০টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ১ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৫টি স্থানে ২৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে, যেগুলো মূলত দেশীয় তৈরি পটকার মতো সরল বিস্ফোরক। তিনি বলেন, এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের জন্য পুলিশ তৎপর। তিনি আরও বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা রোধে পুলিশ কঠোরভাবে কাজ করছে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক এই ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও প্রকাশ্য সহিংসতা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে এবং রাজনীতি বিভক্তি বৃদ্ধি পায়, তাহলে বিপদ আরও সংগঠিত হবে। তাদের মতে, সহিংসতার এই সংস্কৃতি থামানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দুর্বৃত্তায়ন থেকে বিরত থেকে সংলাপ ও সমঝোতার পথে এগোানো। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আরও বলেন, পুলিশ সব সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ঠেকানোর জন্য কঠোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এ সব ঘটনায় বেশ কিছু ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীও গ্রেফতার হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।






















