অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সাম্প্রতিক বক্তৃতায় দেশজুড়ে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে আন্দোলনরত আট দলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে বরং একটি দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে সিদ্ধান্তে কাটছাঁট করছে। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে সেই ঘোষণা, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই সিদ্ধান্তগুলোতে সাধারণ মানুষ যে প্রত্যাশা করেছিলেন, সেই গুরুত্ব এখন আর থাকছে না বলে মনে করছেন দলের নেতারা। একইসঙ্গে তারা অন্তত তিনজন উপদেষ্টার অপসারণের দাবিও জানিয়েছেন, যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হয়।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে ঢাকার মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে এঁরা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগগুলো ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জামিয়াতুল মোয়াল্লামিনের ন্যায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জনগণ আশা করেছিলেন, সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সম্পূর্ণ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু দেখলাম, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ অনুযায়ী, কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি অংশ বাদ পড়েছে এবং একটি দলের আপত্তি মেনে নিয়ে সরকার বড় ধরনের কম্প্রোমাইজ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, নেপথ্যে সরকার নিরপেক্ষতা থেকে সরে এসে একটি দলের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সংস্কার প্যাকেজের ভাগাভাগি নিয়ে মতভেদ:
সংস্কার কমিশন প্রথমে বলেছিল, সকল সংস্কার উপাদান একসঙ্গে গণভোটে যাবে। কিন্তু এবার প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, এটি চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ডা. তাহেরের মতে, এতে ভোটারদের জন্য বিষয়গুলো বোঝা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। নেতারা মনে করছেন, এই বিভাজন বিএনপি বা অন্য কোনো দলের কৌশল—এটা কমিশনের মূলনীতির বিরুদ্ধ, এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।
অন্তর্বর্তী সরকারের নিজস্ব দিকনির্দেশনাও রয়েছে, যার মধ্যে একটি বলছে, পরবর্তী সরকার ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধনী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য থাকবে। যদি তা না হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা গৃহীত বলে গণ্য হবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই দিকনির্দেশনা ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি, যা আবার বিএনপি বা অন্যদের মনে আস্থা কমাতে পারে বলে তিনি মনে করেন। ডা. তাহের শেষমেশ সরকারের এই সদিচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অন্তত সাংবিধানিকভাবে সংবিধানে সংশোধন করার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা বহু দিন ধরে আট দল চেয়েছিল।
গণভোট ও নির্বাচনের একই দিনে হওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ব্যাপক সমালোচনা:
অত্যন্ত বিপরীত মতামত দিয়ে, ডা. তাহের জানান, দেশের অধিকাংশ মানুষ চাইছিলেন— আগে গনভোট হয় এবং আলাদা দিন নির্ধারিত হয়। কিন্তু সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলো যে, দুই ঘটনা একসাথে হবে— যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর। তাঁর মতে, একদিনে ভোটের পরিকল্পনা থাকলে, দলগুলো নিজেদের নির্বাচনী প্রচারে বেশি মনোযোগ দিতে পারবে, ফলে গণভোটে অংশগ্রহণ কম হতে পারে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, ওই ব্যক্তি বা দলগুলো বলবে— জনগণ আসলে সংস্কার চায় না। এটি একটি কূটপ্রকল্প বা ফাঁদ বলেও তিনি মানছেন।
তাঁর দাবি,তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আলাদা দিনে গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হয়।
নিরপেক্ষতা প্রশ্নে সংশয় এবং উপদেষ্টাদের অপসারণের দাবি:
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার এখন আর নিরপেক্ষ নয়, বরং নির্দিষ্ট দলের অনুসারী ব্যক্তিদের প্রশাসনে নিয়োগের মাধ্যমে অবস্থান বদলে চলছে। তিনি বলেন, ‘কমপক্ষে তিনজন উপদেষ্টাকে প্রধান উপদেস্টার ভুল পথে পরিচালিত করছেন, তাদের অপসারণ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
সংস্কার ও নির্বাচনের একসাথে চলার ব্যাপারে ডা. তাহের সহজভাবে এরূপ তুলনা করেন— যেন আপনি কোনও বই কেনার জন্য দোকানে গিয়ে, দোকানদার পুরো বাজারের তালিকা দেখিয়ে বলছে, “এটা নাও, এটা নাও”। সবাই উপকরণ বা বিষয়ের গুরুত্ব বুঝে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, কিন্তু মূল বিষয়ের গুরুত্ব হারিয়ে গেছে।




















